
পোকা, কীট পতঙ্গের কামড় বা বিভিন্ন অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে আমাদের শরীর চুলকোয়। মশা কামড়ানোর পরেই কিছু মানুষের জায়গাটি অসম্ভব চুলকোয়, চুলকানি কিছুতেই বন্ধ হয় না। গবেষণা জানিয়েছে এক ধরনের ইমিউন কোশ এর জন্য দায়ী হতে পারে। ইঁদুরের উপর একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পার্থক্য জানান দেয় কেন কিছু জনের পোকা বা কীট পতঙ্গ কামড়ালে বেশি চুলকোয়।
আমাদের ত্বকে রয়েছে অসংখ্য সংবেদনশীল স্নায়ু কোশ যা পরিবেশের পরিবর্তন শনাক্ত করে এবং তারপর প্রতিক্রিয়া দেখায়। যখন একজন ব্যক্তি মশার লালার মতো কোন অ্যালার্জেনের সম্মুখীন হয়, তখন এই নিউরনগুলো তা শনাক্ত করে এবং প্রতিক্রিয়া হিসাবে চুলকানি শুরু হয়। তারা কাছাকাছি ইমিউন কোশকেও সক্রিয় করে তোলে এবং সেই স্থান ফুলে যায় বা লাল হয়ে যায়। এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা বারবার অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে তাদের দীর্ঘস্থায়ী অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ হতে পারে। অনেকসময় প্রদাহের জায়গার কলায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন আসে। অ্যালার্জেনের প্রতিক্রিয়ায় ইমিউন কোশ স্নায়ুর সংবেদনশীলতা পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে তারা একটি পদার্থের প্রতি কম বা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। ইঁদুর নিয়ে করা পরীক্ষায় গবেষকরা ইঁদুরকে প্যাপেইন নামের এক রাসায়নিকের সংস্পর্শে এনেছিল। প্যাপেইন ইঁদুরের ত্বকে চুলকানি সৃষ্টি করে, ফলে ইঁদুর তার ত্বকে আঁচড় দেয়। গবেষণায় ইঁদুরের বিভিন্ন দলের বিভিন্ন ইমিউন কোশ অনুপস্থিত ছিল। নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যে ইঁদুরগুলোতে নির্দিষ্ট ধরণের টি কোশের অভাব ছিল তারা প্যাপাইনের সংস্পর্শে আসার পরেও তাদের ত্বকে চুলকানির অনুভূতি হয় না। গবেষকরা ইঁদুরের কোশীয় স্তরে বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণ এবং জেনেটিক সিকোয়েন্সিং করে দেখেন যে ত্বকে এক ধরনের ইমিউন কোশ রয়েছে যা GD3 কোশ নামে পরিচিত। পরিবেশগত নানান ট্রিগারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই ইমিউন কোশ IL-3 নামে একটি অণু তৈরি করে। IL-3 শরীরের সংবেদনশীল নিউরন, যা চুলকানির অনুভূতি সৃষ্টি করে, তার উপর সরাসরি কাজ করে। IL-3 সরাসরি চুলকানি সৃষ্টি না করে, সংবেদনশীল স্নায়ুগুলোকে অ্যালার্জেনের প্রতি আরও প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। প্রাথমিকভাবে গবেষকরা দেখেন যে এই প্রক্রিয়াটিতে একটি সংকেত পথ রয়েছে যা নির্দিষ্ট অণুর উত্পাদনকে বাড়িয়ে তোলে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু করে। তবে এখনও পর্যন্ত, গবেষণাটি শুধুমাত্র ইঁদুরের মধ্যে করা হয়েছে, তাই এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না মানুষের কোশের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। গবেষকদের অনুসারে ভবিষ্যতে এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের টি কোশগুলো IL-3 এর প্রতি আদৌও কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায় কিনা এবং দেখালে তা কীভাবে।