মস্তিষ্কেও জমছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিককণা

মস্তিষ্কেও জমছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিককণা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ আগষ্ট, ২০২৪
প্লাস্টিককণা

মানুষের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ক্ষেত্রে যে বিপজ্জনক সঙ্কট ক্রমাগত মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তার নাম মাইক্রোপ্লাস্টিক। শরীরের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত এই প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার ব্যাস ৫ মিলিমিটারেরও কম। বায়ু, জল এবং এমনকি খাবারের মাধ্যমে অনেক পরিমাণে এসব প্লাস্টিক কণা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে এমন বহু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা একবার ঢুকলে মানবশরীরে থেকে যায় আমৃত্যু। পৌঁছে যায় বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। তখন সেই অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়া ও কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। ধীরে ধীরে তাদের অচল করে দেয়। খাবারে মাইক্রোপ্লাসটিক দূষণের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায়, প্রথমবার মানুষের মস্তিষ্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে যা অত্যন্ত ভীতিকর এবং উদ্বেগজনক। এই ক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণাগুলো তাদের আকারের কারণে অধ্যয়ন করা কঠিন। এমনকি একটি জোরাল মাইক্রোস্কোপ দিয়েও এদের ঠিক করে পর্যবেক্ষণ করা দুষ্কর। তাই তাদের দেখার চেষ্টা করার পরিবর্তে, গবেষকরা জটিল যন্ত্র ব্যবহার করেন যা একটি নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের রাসায়নিক গঠন শনাক্ত করে। উদ্বেগজনকভাবে গবেষকরা লিভার এবং কিডনির তুলনায় মস্তিষ্কের নমুনায় ৩০ গুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক খুঁজে পেয়েছেন। তাদের অনুমান মস্তিষ্কে উচ্চ রক্ত প্রবাহের কারণে রক্তের সাথে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। অন্যদিকে, লিভার এবং কিডনি বাইরের বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিনের সাথে মোকাবিলা করার জন্য সম্ভবত আরও উপযুক্ত। গবেষকরা আরও দেখেন যে ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মস্তিষ্কের নমুনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ প্রায় ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের বৃদ্ধির ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আজ প্লাস্টিকের দেখা মিলছে। এই গবেষণায় পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো বেশিরভাগ পলিইথিলিন দ্বারা গঠিত। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উত্পাদিত প্লাস্টিক এটি। বোতলের ক্যাপ থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগ দৈনন্দিন অনেক জিনিসেই পলিইথিলিন ব্যবহৃত হয়।
প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাগুলো সাধারণত খাবার ও জলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে ব্যাহত করে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে ইমিউন সিস্টেম এবং অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে জটিল, দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারা শরীরকে প্রভাবিত করে। আমরা বায়ুবাহিত মাইক্রোপ্লাস্টিকের মধ্যেও শ্বাস নিতে পারি। একবার এই কণাগুলো অন্ত্রে বা ফুসফুসে ঢুকে গেলে, তারা রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রবেশ করে। গবেষণায় মানুষের মলে, জয়েন্টে, লিভারে, প্রজনন অঙ্গে, রক্তে, ধমনীতে এবং হার্টে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
মস্তিষ্কের কলাতে প্রবেশ করতে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলোকে ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ার অতিক্রম করে থাকে। আর প্লাস্টিক কণাগুলো তাও অতিক্রম করে। আর এটা মোটেও আশ্চর্যজনক নয়, কারণ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রস্রাব, অণ্ডকোষ এবং প্ল্যাসেন্টায় প্রবেশের জন্য অনুরূপ কোশের বাধা অতিক্রম করতে হয়। ইতিমধ্যেই এই সব অঙ্গে প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। গবেষকরা মনে করেন গবেষণার ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে, প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা করার জন্য এখনই বিশ্বব্যাপী জরুরি ব্যবস্থাপনা নেওয়া প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 4 =