মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধির ভেদাভেদ

মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধির ভেদাভেদ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধির ভেদাভেদ

হীরক রাজা বুদ্ধিমান, করো সবই তার জয়গান। আর যারা হীরক রাজার খনিতে খাটত ! তাদের বুদ্ধি? মগজধোলাই- ক্রমাগত সামাজিক মগজধোলাই, প্রকট বৈষম্য, অর্থনৈতিক অসমতা, মাত্রারিক্ত দূষণ সবটাই প্রভাব ফেলতে পারে এই মগজে। নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত সমীক্ষা বলছে, যে সব দেশে মানুষের মধ্যে এই সমস্ত বৈষম্য খুব প্রকট সে দেশে মানুষের মস্তিষ্কের বয়স বাড়ে তাড়াতাড়ি৷

বিজ্ঞানীদের মতে, ব্যক্তিভেদে মস্তিষ্কের বয়স বাড়ে। এর গতিও আলাদা আলাদা। অর্থাৎ ১০ বছরের দুই ব্যক্তি তাদের একজনের মস্তিকের বয়স হতে পারে ৭-৮ অন্যদিকে অপরজনের হতে পারে ১২ কিংবা ১৪। অর্থাৎ ব্যক্তি কত দিন বেঁচে আছে, তার থেকে তার মস্তিস্কের বয়সের মধ্যে একটা ব্যবধান তৈরি হয় বা থাকে। এই পার্থক্যটা বেশ কিছু বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। পরিবেশগত কারণ যেমন দূষণ, সামাজিক কারণ যেমন ব্যক্তির আয় বা স্বাস্থ্যগত ভেদাভেদ বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের এবং যাদের ডিমেনশিয়া আছে তাদের ক্ষেত্রে এই পার্থক্য বেশি লক্ষ করা যায়। কিছু বছর আগে অবধি, এটা স্পষ্ট ছিল না যে কীভাবে, কোন কারণগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার মানুষের মধ্যে, তাদের মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত বা বিলম্বিত করছে।

এই গবেষণায় ল্যাটিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান (এল এ সি) দেশ এবং নন-এল এ সি দেশ সহ ১৫টা দেশের ৫৩০৬ জন অংশগ্রহণকারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দেশগুলিতে আর্থ- সামাজিক, পরিবেশিক তফাৎ লক্ষ্যনীয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সুস্থ ব্যক্তি এবং যাদের নিউরোডিজেনারেটিভ ব্যাধি (যেমন অল্প মাত্রায় বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা, অ্যালজাইমার্স রোগ, এবং ফ্রন্টোটেম্পোরাল লোব ডিজেনারেশন রয়েছে) এরকম ব্যক্তিদের নেওয়া হয়। ফাংশানল ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এফ এম আর আই) এবং ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি (ই ই জি) থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা তাদের বয়স এবং তাদের মস্তিষ্কের বয়সের পার্থক্য পরিমাপ করেছেন। গবেষণায়, আন্তর্জাতিক গবেষকদের দল অ্যাডভান্সড ব্রেন ক্লক ব্যবহার করে, মস্তিষ্কের বার্ধক্য পরিমাপ করার উপায় তৈরি করেন।

সেন্টার ফর বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রধান ড. ড্যানিয়েল আবাসোলো বলছেন তাদের এই গবেষণা দেখাচ্ছে, যেসব দেশে বৈষম্য বেশি, সেখানে মানুষের মস্তিষ্কের বয়স দ্রুত বাড়ে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের যে অংশগুলো বার্ধক্যের জন্য দায়ী সেগুলোর ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, বায়ু দূষণ এবং রোগের প্রভাব, এই তাড়াতাড়ি বার্ধক্য ডেকে আনতে একটা বড়ো ভূমিকা পালন করে। দরিদ্র দেশগুলোর হিঊম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স বাড়াতে এই পরীক্ষার ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতিপন্ন হতে পারে- গবেষকদের ধারণা।