খুব অল্প সময়ের জন্য কীটনাশকের সংস্পর্শে এলেও মস্তিষ্কের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে, এমনকি সরাসরি উন্মুক্তির পরেও এই ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সাধারণত মানুষের মস্তিষ্কের অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতা খুব বেশি, তাই মারাত্মক ট্রমা থেকেও মস্তিষ্ক নিজেকে নিরাময় করতে সক্ষম। কিন্তু অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক রামন ভেলাজকুয়েজ আর ট্রান্সলেশনাল জিনোমিক্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট (টিজেন) গবেষকরা দেখিয়েছেন যে হার্বিসাইড গ্লাইফোসেটের সংস্পর্শে এলে ইঁদুরের মস্তিষ্কের উল্লেখযোগ্য প্রদাহ তৈরি হয়, যা নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের সাথে যুক্ত। কীটনাশকে এই রাসায়নিকের ব্যবহার আমেরিকাতে খুব বেশি।
জার্নাল অফ নিউরোইনফ্লেমেশন-এ প্রকাশিত গবেষণায় ইঁদুরের গ্লাইফোসেটের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে নিউরোইনফ্লেমেশনের লক্ষণ, তার সাথে অ্যালজাইমার্স রোগের মতো প্যাথলজির সম্পর্ক দেখায়। এই গবেষণায় কীটনাশকের সংস্পর্শ শেষ হওয়ার অনেক পরেও মস্তিষ্কে গ্লাইফোসেট উপজাতের উপস্থিতি এবং প্রভাব উভয়ই ট্র্যাক করা হয়েছে, যাতে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর ক্রমাগত, ক্ষতিকারক প্রভাবের ফল দেখা যায়। গ্লাইফোসেটের সংস্পর্শে আসা ইঁদুরদের অকাল মৃত্যু, উদ্বেগের মতো আচরণ দেখা দেয়। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন কীটনাশকের সংস্পর্শ না থাকলেও এই লক্ষণগুলো ৬-মাস পরেও থেকে গিয়েছিল। তাছাড়া, গ্লাইফোসেটের উপজাত, অ্যামিনোমিথাইলফসফোনিক অ্যাসিড মস্তিষ্কের কলাতে জমা হয়, যা মানুষদের রাসায়নিকের নিরাপত্তা সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ জাগাচ্ছে। ভেলাজকুয়েজ বলেছেন, বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যা বিশেষ করে গ্রামীণ সম্প্রদায়ে ক্রমবর্ধমান জ্ঞানীয় হ্রাসের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, এই কীটনাশকের প্রভাব সম্পর্কে আরও মৌলিক গবেষণার জরুরী প্রয়োজন।
সেন্টার ফর ডিজিজ রিসার্চ অনুসারে, কৃষিকাজের সাথে যুক্ত শ্রমিক, বা কৃষিতে নিযুক্ত অন্য ব্যক্তিদের শ্বাস নেওয়া বা ত্বকের মাধ্যমে গ্লাইফোসেটের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বেশি। গবেষণা বলছে কীটনাশক স্প্রে করা খাবারগুলোতে গ্লাইফোসেটের অবশিষ্টাংশ খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকতে পারে। এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশান এজেন্সি (ইপিএ)-র বক্তব্য ছিল, নির্দিষ্ট মাত্রার গ্লাইফোসেট মানুষের পক্ষে নিরাপদ। তাদের মত অনুযায়ী এই রাসায়নিক ন্যূনতমভাবে শরীরে শোষিত হয়ে প্রাথমিকভাবে অপরিবর্তিতভাবে নির্গত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে গ্লাইফোসেট, এবং এর প্রধান বিপাকীয় অ্যামিনোমিথাইলফসফোনিক অ্যাসিড, শরীরে থেকে যেতে পারে আর সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্কের কলাতে জমা হতে পারে। গবেষকরা দু ধরনের গ্লাইফোসেটের মাত্রার সংস্পর্শের প্রতিক্রিয়া দেখেছেন, একটা বেঁধে দেওয়া মাত্রা, অপরটা উচ্চ মাত্রা। বেঁধে দেওয়া নিম্ন মাত্রাতেও ইঁদুরদের মস্তিষ্কে ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা গেছে। ভেলাজকুয়েজ জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ হল জ্ঞানীয় পতন এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ক্রমবর্ধমান প্রকোপের ক্ষেত্রে পরিবেশগত কারণগুলো চিহ্নিত করা। কারণ খুঁজে বের করে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা ও এই ধরনের সংস্পর্শ হ্রাস করার কৌশল তৈরি করা যেতে পারে।