
হাত-পা বিহীন একজন ব্যক্তি শুধু মস্তিষ্কের সংকেত ব্যবহার করে কম্পিউটার গেম খেলতে পেরেছেন। চীনের নতুন একটি কোম্পানি স্টেয়ার মেড-এর উদ্ভাবিত গভীর-মস্তিষ্ক অনুপ্রবেশকারী ব্যবস্থা এই অসাধারণ কাজ সম্ভব করেছে। এটি চীনের ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) প্রযুক্তির এক বড় সাফল্য। যন্ত্রটি আকারে ছোট এবং ইলন মাস্কের নিউরো লিংকের তুলনায় সহজ ও কার্যকর। এতে ৬৪টি অতিক্ষুদ্র সংবেদক রয়েছে। এরা মানুষের চুলের এক শতাংশ সমান পুরু। মস্তিষ্কের কর্টেক্সে এই যন্ত্রটি বসিয়ে তথ্য সম্পূর্ণ বিনা তারে সঞ্চালন করা হয়। প্রথম পরীক্ষামূলক ব্যবহারকারী এখন মস্তিষ্কের সংকেত দিয়েই দাবা ও রেসিং গেম খেলছেন।
প্রতিষ্ঠাতা জাও বলছেন, এটি চীনের প্রথম ইনভেসিভ BCI ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। একই সঙ্গে, চীনের আরেকটি যন্ত্র NEO পক্ষাঘাতগ্রস্তদের হাতে গতি ফিরিয়ে দিচ্ছে। এটি মস্তিষ্কের বাইরের আচ্ছাদনে আটটি সংবেদক বসিয়ে মস্তিষ্কের সংকেত সংগ্রহ করে, নিউম্যাটিক গ্লাভসের মাধ্যমে হাতের শক্তি ও গতি বাড়ায়। ২০২৩ সালের অক্টোবরেই প্রথম এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছিল, যা রোগীর খাবার খাওয়া ও জল পান করতেও সাহায্য করছে। সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নিউরনের আচরণ অনুকরণকারী চিপ ব্যবহার করে এই যন্ত্রটিকে আরও ক্ষুদ্র, শক্তি-দক্ষ ও দ্রুততর করেছেন। নেচার ইলেক্ট্রনিক্সে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, এই চিপ সরাসরি অতি-সূক্ষ্ম তড়িৎদ্বারের সঙ্গে যুক্ত থাকে, ফলে প্রক্রিয়াটি সুশৃঙ্খল হয়। সাংহাই-এর NeuroXess কোম্পানি সম্প্রতি ২৫৬টি অতি-সূক্ষ্ম তড়িৎদ্বার যুক্ত আরেকটি যন্ত্র মহিলার মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ অনুশীলনের পর তিনি হুইলচেয়ার চালাতে ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন। অন্য এক রোগী মস্তিষ্কের ভাষা প্রক্রিয়াকরণ অংশে টিউমার থাকা সত্ত্বেও মান্দারিন ভাষায় প্রতি মিনিটে ৫০টি শব্দ বলার সক্ষমতাঅর্জন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের ইতিহাস এই ক্ষেত্রে ছোট হলেও, রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা, তরুণ গবেষক ও বিশাল চিকিৎসা অবকাঠামো চীনকে দ্রুত এগিয়ে দিচ্ছে। জাওর মতে, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি শুধু কার্সার নয়, স্মার্ট হুইলচেয়ার, উন্নত রোবট এবং স্বচালিত প্রযুক্তিতেও ব্যবহার হবে।