মস্তিষ্ক নিজেকে পুনর্নির্মাণ করে না, বরং বিদ্যমান সুপ্ত ক্ষমতা বাড়ায়

মস্তিষ্ক নিজেকে পুনর্নির্মাণ করে না, বরং বিদ্যমান সুপ্ত ক্ষমতা বাড়ায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

ই-লাইফে প্রকাশিত একটা লেখায় অধ্যাপক তামার মাকিন (কেমব্রিজ) এবং জন ক্রাকাউয়ার (জন হপকিন্স) যুক্তি দেন যে আঘাত বা শারীরিক কোনো ঘাটতির প্রতিক্রিয়া হিসাবে মস্তিষ্ক নিজেকে পুনর্গঠিত করতে পারে এবং নতুন কাজের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে পারে, এই ধারণাটি মৌলিকভাবে ত্রুটিযুক্ত — যদিও সাধারণত বৈজ্ঞানিক পাঠ্যপুস্তকে এই উদ্ধৃত করা হয়। পরিবর্তে, তারা যুক্তি দেয় যে এক্ষেত্রে মস্তিষ্ককে তার বিদ্যমান, কিন্তু সুপ্ত, ক্ষমতা ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যখন একজন ব্যক্তি তার দৃষ্টিশক্তি হারায় — অথবা জন্মগতভাবে অন্ধ হয়ে যায় তখন মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স অঞ্চল যা পূর্বে দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণে বিশেষীকৃত ছিল, শব্দ প্রক্রিয়াকরণের জন্য পুনরায় সংযুক্ত হয়, এবং ব্যক্তিটিকে ‘ইকোলোকেশন’-এর একটি রূপ ব্যবহার করতে দেয় যাতে সে একটি অগোছালো ঘরে নিজের পথ খুঁজে নিতে পারে। আবার যখন কোনো ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত এবং প্রাথমিকভাবে হাত-পা নড়াচড়া করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখন মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ পুনরায় কাজ করে যাতে সে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
গবেষকরা তাদের নিবন্ধে বলেছে যে তারা দশটি মৌলিক গবেষণা অধ্যয়ন করে যা মস্তিষ্কের পুনর্গঠনের ক্ষমতা ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। কিন্তু গবেষকরা যুক্তি দেয় যে, যদিও গবেষণায় প্রকৃতপক্ষে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য মস্তিষ্কের ক্ষমতার কথা বলেছে কিন্তু মস্তিষ্কের কোনো অংশ এখানে নতুন কোনো কাজ করছে না বরং এটি জন্মের পর থেকে উপস্থিত থাকা সুপ্ত ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে।
সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল মারজেনিচ ১৯৮০-র দশকে একটি গবেষণায় দেখান যে হাতের প্রতিটি আঙুলের সঙ্গে মস্তিষ্কে এক একটি নির্দিষ্ট অংশের যোগসূত্র রয়েছে। মারজেনিচ যুক্তি দিয়েছিলেন যে তর্জনীটি কোনো ভাবে কাটা গেলে ওই আঙুলের জন্য পূর্বে বরাদ্দকৃত মস্তিষ্কের ক্ষেত্রটি পাশাপাশি আঙুল থেকে সংকেত প্রক্রিয়াকরণের জন্য পুনরায় নির্ধারিত হয় অর্থাৎ সংবেদনশীল ইনপুট পরিবর্তিত হলে প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্ক নিজেকে পুনর্নির্মাণ করে। কিন্তু মাকিন একটি বিকল্প ব্যাখ্যা প্রদান করে। ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়, মাকিন তর্জনী কেটে ফেলার প্রভাব অনুকরণ করতে অস্থায়ীভাবে একটি নার্ভ ব্লকার ব্যবহার করেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন যে কেটে ফেলার আগেও, পার্শ্ববর্তী আঙুলের সংকেত তর্জনীর জন্য নির্দিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলে ম্যাপ করা হয়েছিল অর্থাৎ মস্তিষ্কের এই অঞ্চলটি প্রাথমিকভাবে তর্জনী থেকে সংকেত প্রক্রিয়াগত করলেও অঙ্গচ্ছেদের পরে মস্তিষ্ক অন্যান্য আঙুল থেকে বিদ্যমান সংকেত প্রক্রিয়াগত করতে শুরু করে। মাকিন এবং ক্রাকাউয়ার আগের গবেষণাগুলো সম্পূর্ণ রূপে খারিজ না করে যুক্তি দেয় যে নতুন কাজের জন্য মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলোকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্নিমাণের পরিবর্তে, মস্তিষ্ক তার পূর্ব-বিদ্যমান কাঠামোকে উন্নত বা সংশোধন করছে — এবং এটি পুনরাবৃত্তি এবং শেখার মাধ্যমে ঘটছে। গবেষকদের মতে অনেকবার, মস্তিষ্কের পুনর্ব্যবহার করার ক্ষমতাকে ‘অলৌকিক’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে — কিন্তু বিজ্ঞানীরা, জাদুতে বিশ্বাস করে না। এই আশ্চর্যজনক আচরণ যা দেখা যায় তার মূলে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, পুনরাবৃত্তি এবং প্রশিক্ষণ।