বিজ্ঞানীরা এক নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছেন যা ইলেকট্রনিক, অস্থায়ী ট্যাটু ব্যবহার করে মস্তিষ্কের তরঙ্গ পরিমাপ করতে পারে। গবেষকরা বলছেন এই পদ্ধতি প্রথাগত ইলেক্ট্রোয়েনসেফালোগ্রাম (ইইজি) পরীক্ষার তুলনায় মস্তিষ্কের কার্যকলাপ নিরীক্ষণ, স্নায়বিক অবস্থা যেমন খিঁচুনি, মৃগীরোগ এবং মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয় করার দ্রুত ও সুবিধাজনক উপায়। ইইজি টেস্টের সময়, টেকনিশিয়ানরা সাধারণত মাথার ত্বকে ইলেক্ট্রোড আটকানোর আগে মাথায় স্কেল ও পেনসিল দিয়ে দাগ দেয়। তারপর ইলেক্ট্রোডগুলো দীর্ঘ তারের মাধ্যমে এক মেশিনের সাথে সংযুক্ত করা হয় যা মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করে, বা ইলেক্ট্রোডসমেত ক্যাপ সরাসরি মাথায় স্থাপন করা হয়। কিন্তু এই পুরো প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, অসুবিধাজনক, একটি ইইজি পরীক্ষা সেট আপ করতে সাধারণত এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বিভাগের নানশু লু বলেছেন, এরপর ইলেক্ট্রোডগুলো প্রতি দুই ঘন্টা পরপর পর্যবেক্ষণ করতে হয়, কারণ যে আঠা তাদের মাথার ত্বকের সাথে আটকে রাখে তা শুকিয়ে যায়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, নতুন প্রযুক্তিতে, পরিবাহী উপাদান দিয়ে তৈরি ডিজিটালভাবে প্রোগ্রাম করা জেট কালির একটা রোবট ব্যবহার করা হয়। এটা ব্যক্তির মাথার ত্বকে নির্দিষ্ট অবস্থানে মুদ্রণ করা হয়, এটা সময় এবং শ্রম উভয়ই বাঁচায়। বর্তমানে, এই মুদ্রণ প্রক্রিয়াতে এক ঘন্টা সময় লাগে, কারণ একজন ব্যক্তির মাথার নড়াচড়া হাতেকলমে সংশোধন করতে হয়। ভবিষ্যতে অভিযোজিত মুদ্রণ সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় হতে পারে, যাতে পুরো মুদ্রণ প্রক্রিয়া ২০ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। ইলেকট্রনিক ট্যাটুর এই কালি শুকিয়ে একটা পাতলা স্তর পড়ে। এটা ৩০ মাইক্রোমিটার পুরু, যা মানুষের চুলের প্রস্থের অর্ধেক। সাধারণ ইইজি ইলেক্ট্রোডের মতো, এই ই-ট্যাটুগুলো মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। সেল বায়োমেটিরিয়ালস জার্নালে গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা ৫ জন এমন ব্যক্তি নেন, যাদের ছোটো চুল। তাদের ওপর পুরোনো ইইজি ও বর্তমান ই-ট্যাটু পরীক্ষা করে দেখা হয়। তাতে দেখা গেছে ই-ট্যাটু দারুণভাবে মস্তিষ্কের তরঙ্গ পরিমাপ করতে পারছে।
ইইজির তুলনায় ই-ট্যাটু সম্পূর্ণ একদিন মস্তিষ্কের কার্যকলাপ শনাক্ত করতে পারে, ইইজি ইলেক্ট্রোড ৬ ঘণ্টার পরে খসে পড়ে। আর ই-ট্যাটু শ্যাম্পু বা অ্যালকোহল ব্যবহার করে মুছে ফেলা যায়। ইইজি তোলা এর তুলনায় কঠিন। নানা মাপের চুলের উপযোগী, বালিশে লেগে উঠে যাবে না এমন কালি তৈরির চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে তারবিহীন ডাটা ট্রান্সমিটার যোগ করে এটা পোর্টেবেল করে তোলার পরিকল্পনাও চলছে।