মহাকাশে অপার্থিব অ্যালকোহল

মহাকাশে অপার্থিব অ্যালকোহল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ আগষ্ট, ২০২৫

মানোয়ার হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের বিজ্ঞানীরা মিথেনটেট্রোল অণুকে সফলভাবে সংশ্লেষিত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ধারাণা ছিল এটি এতই স্থিতিহীন যে এর প্রাকৃতিক অস্তিত্ব থাকতে পারে না। গভীর মহাকাশে পাওয়া চরম অবস্থার অনুরূপ পরিস্থিতির প্রতিরূপ তৈরি করে তাঁরা এই আবিষ্কারটি করেছেন। এর ফলে মহাবিশ্বে কীভাবে জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে পারে সে সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা গেছে। মিথেনটেট্রোল পরিচিত অ্যালকোহল থেকে আলাদা। এতে চারটি হাইড্রোক্সিল গ্রুপ (OH) একটি একক কার্বন পরমাণুর সাথে সংযুক্ত । জার্মান রসায়নবিদ কার্ল উইল্ক এক শতাব্দীরও আগে মিথেনটেট্রোল (C(OH)4)-এর অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই প্রথম এটি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হল। এর আরেক নাম অর্থোকার্বোনিক অ্যাসিড। গবেষকদলটি আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘের হিমশীতল, প্রায়-শূন্য পরিবেশের অনুকরণ করে তীব্র বিকিরণের সংস্পর্শে উপাদানগুলিকে উন্মুক্ত করেছেন। এইভাবে তাঁরা মিথেনটেট্রোল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি করে সাফল্য অর্জন করেছেন।

এই আবিষ্কার থেকে দেখা যায় যে মহাকাশে পূর্বে যা ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়েও অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় এবং অপ্রত্যাশিত রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে পারে। এইসব বিক্রিয়া ছায়াপথ জুড়ে জীবন গঠনকারী জৈব অণু উপাদানের গঠন বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণা বরফের ধুলোর মেঘে যেখানে নক্ষত্র এবং গ্রহ তৈরি হয় সেখানে জটিল যৌগগুলি কীভাবে বিকশিত হতে পারে তার একটি আশ্চর্যজনক পথ উন্মোচন করেছে। গবেষকরা জল এবং কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে তৈরি সামান্য পরিমাণ মিথেনটেট্রোল শনাক্ত করতে শক্তিশালী ভ্যাকুয়াম আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ব্যবহার করে। তাঁরা দেখেন, উচ্চ-শক্তির কণাগুলি উচ্চ-শক্তির মহাজাগতিক রশ্মির অনুকরণে একাধিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার সূত্রপাত করে। আর সেই বিক্রিয়া থেকেই মিথেনটেট্রোল এবং সম্পর্কিত যৌগ তৈরি হয়।

রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক রাল্ফ আই. কাইজার-এর কথায়, ” মিসিসিপি, সামারা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাংহাইয়ের বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় নিষ্পন্ন এই কাজটি মহাকাশে রসায়ন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমানা অনেকটা বাড়িয়ে দিল”। এই অ্যালকোহলটি দৈনন্দিন পরিস্থিতিতে স্থিতিহীনতার কারণে পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় না । কিন্তু মহাকাশে এর গঠন প্রমাণ করে যে মহাবিশ্ব আগে যা কল্পনা করা গিয়েছিল তার চেয়ে রাসায়নিকভাবে অনেক বেশি গতিশীল। এই আবিষ্কারগুলি রসায়ন এবং জ্যোতির্বিদ্যা উভয়ের সীমানাকে প্রসারিত করে এবং মহাকাশের শীতলতম অন্ধকার কোণে জীবনের উপাদানগুলি কীভাবে আবির্ভূত হতে পারে সে সম্পর্কে আরও আবিষ্কার এবং জ্যোতিঃ-পর্যবেক্ষণের দ্বার উন্মুক্ত করে।

সূত্র : “Methanetetrol and the final frontier in ortho acids” by Joshua H. Marks, Xilin Bai, Anatoliy A. Nikolayev, Qi’ang Gong, Mason McAnally, Jia Wang, Yang Pan, Ryan C. Fortenberry, Alexander M. Mebel, Tao Yang and Ralf I. Kaiser, 14 July 2025, Nature Communications.
DOI: 10.1038/s41467-025-61561-z

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five − 1 =