
সারা পৃথিবীর বহু বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন অণু খুঁজতে গিয়ে খোঁজ মিলল দীর্ঘদিন ধরে অদৃশ্য বিশাল এক হাইড্রোজেন পিণ্ডর। তড়িৎচুম্বক বর্ণলিপির অতিবেগুণি অঞ্চলের শেষ প্রান্ত থেকে নির্গত আলোর সাহায্যে এই প্রথম একটা আণবিক মেঘপুঞ্জ শনাক্ত করা গেল। গ্রিক পুরাণের অনুষঙ্গে হাইড্রোজেন অণুর এই মেঘপুঞ্জটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইয়স (Eos) ’, যার অর্থ ঊষা। নেচার অ্যাস্ট্রনমিতে এ গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে।
আণবিক মেঘপুঞ্জ তৈরি হয় গ্যাস আর ধুলো দিয়ে। তার প্রধান উপাদান হাইড্রোজেন অণু, যা কিনা তারকা আর গ্রহর মূল নির্মাণ-উপাদান। প্রাণের জন্যও তা অপরিহার্য। এছাড়া কার্বন মনোক্সাইড প্রমুখ গ্যাসও থাকে সেই আণবিক মেঘে। সচরাচর রেডিও আর অবলোহিত পর্যবেক্ষণের সাহায্যেই আণবিক মেঘ শনাক্ত করা হয়, কারণ এ থেকেই সহজে কার্বন মনোক্সাইডের রাসায়নিক স্বাক্ষর শনাক্ত করা যায়। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা অন্য একটা পরিমার্গ (অ্যাপ্রোচ) বেছে নিয়েছিলেন। গবেষক বুর্কহার্ট বলেছেন, ‘এই প্রথম অতিবেগুণি অঞ্চলের শেষ প্রান্ত থেকে নির্গত আলোকপ্রভার সাহায্যে জ্বলজ্বলে হাইড্রোজেন অণু শনাক্ত করা হল। আক্ষরিক অর্থেই আঁধারে ঝলমল করছিল মেঘপুঞ্জটা’।
ঊষা পৃথিবী কিংবা সৌরমণ্ডলের কোনো বিপদ সৃষ্টি করে না। কিন্তু এত কাছে আছে বলে এ থেকে নক্ষত্রগুলির অন্তর্বর্তী পরিসরে অবস্থিত একটি কাঠামোকে অধ্যয়ন করবার এক অনন্য সুযোগ পাওয়া গেল। ওই পরিসরে অবস্থিত গ্যাস আর ধুলোই তো নতুন তারকা তৈরির কাঁচামাল। আণবিক মেঘপুঞ্জ কীভাবে তৈরি হয়, কীভাবে ছড়িয়ে যায়, কীকরে একটা গ্যালাক্সি আন্তঃনাক্ষত্রিক পরিসরের গ্যাস আর ধুলোকে তারকা আর গ্রহে রূপান্তরিত করে, সেটা এবার সরাসরি মাপা যাবে। পৃথিবী থেকে ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত অর্ধচন্দ্রাকৃতি এই গ্যাস-মেঘপুঞ্জটির অধিষ্ঠান মহাকাশে সৌর জগতকে ঘিরে-থাকা ‘স্থানীয় বুদবুদ’ নামে অভিহিত বিশাল গ্যাস-গহ্বরটির ঠিক কিনারে। বিজ্ঞানীদের হিসাব মতো ঊষার আয়তন আকাশ জুড়ে চল্লিশটা চাঁদের সমান, ভর সূর্যের ৩৪০০ গুণ। বিভিন্ন মডেলের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন ৬০ লক্ষ বছর পর এটি বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ার কথা।
কোরিয়ার একটি উপগ্রহে বসানো অতিবেগুণির শেষপ্রান্তীয় একটি স্পেক্ট্রোগ্রাফ যেসব উপাত্ত (ডেটা) সংগ্রহ করে তা থেকেই এই ঊষার হদিশ মেলে। এই স্পেক্টোগ্রাফ কোনো বস্তু থেকে নিঃসৃত অতিবেগুণির শেষপ্রান্তীয় আলোকে তার বিভিন্ন উপাদানে অর্থাৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ভেঙে নেয়। এর ফলে যে-বর্ণলিপি তৈরি হয় তা বিশ্লেষণ করেন বিজ্ঞানীরা। শ্রীমতী বুর্কহার্ট বলেছেন, ঊষায় হাইড্রোজেনের প্রাধান্য থাকলেও কার্বন মনোক্সাইড কিন্তু প্রায় নেই। সেই জন্যই এটি এতদিন শনাক্ত করা যায়নি। এতে উপস্থিত হাইড্রোজেন বিগ ব্যাঙের সময়েও হাজির ছিল। শেষ পর্যন্ত এটি আমাদের গ্যালাক্সির মধ্যে এসে সূর্্যেির কাছাকাছি জায়গায় পুঞ্জীভূত হয়। অর্থাৎ এই হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো ১৩.৬ বিলিয়ন বছর ধরে এক দীর্ঘ যাত্রা চালাচ্ছে। আগে জানা ছিল, সরাসরি আণবিক হাইড্রোজেনকে কখনো দেখা সম্ভব নয়। অথচ সেটাই আজ কার্যক্ষেত্রে সম্ভব হয়েছে।
সূত্র: “Rutgers University. “A vast molecular cloud, long invisible, is discovered near solar system.” ScienceDaily. ScienceDaily, 28 April 2025.