মহাকাশ ভ্রমণ হৃদপিণ্ডকে দুর্বল করে

মহাকাশ ভ্রমণ হৃদপিণ্ডকে দুর্বল করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
মহাকাশ ভ্রমণ

মহাকাশে বেশি সময় কাটালে মানবদেহে সমস্যা হয়, একথা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ সংস্থা ইন্টারন্যাশানাল স্পেস স্টেশন (ISS) এ থাকা মানুষ, প্রাণী এবং উদ্ভিদের উপর মাইক্রোগ্রাভিটির প্রভাব নিয়ে বহু বছর গবেষণা করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকার ফলে পেশিক্ষয়, হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস, দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন, জিনের অভিব্যক্তি, মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা দেখা দেয়। ভবিষ্যতে চাঁদ, মঙ্গল বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী মিশনের ক্ষেত্রে মানব শরীরে কী ধরনের প্রভাব পড়ে, আর কীভাবে সেই প্রভাব হ্রাস করা যায় তা জানা জরুরি। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নেতৃত্বে এবং NASA এর জনসন স্পেস সেন্টারের সাম্প্রতিক এই পরীক্ষা অনুসারে, মানুষের হৃদপিণ্ড মহাকাশে ভালোভাবে কাজ করে না। মাইক্রগ্র্যাভিটি হৃদপিন্ডের কলা দুর্বল করে দেয়, তার সাথে এর সংকোচন প্রসারণের ছন্দ নষ্ট করে। এই গবেষণা প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস – এ প্রকাশিত হয়েছে। আগের গবেষণায় শরীরে কী সমস্যা হয় তা দেখা হলেও, কোশীয় ও আণবিক স্তরে কী হয় তা দেখা হয়নি।
গবেষকরা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল (আইপিএসসি) এর আদলে হৃদপেশির কার্ডিওমায়োসাইটস কলা তৈরি করে একটা ক্ষুদ্রাকৃতি বায়োইঞ্জিনিয়ারড টিস্যু চিপে স্থাপন করেন। এই চিপগুলো হৃদপেশির কলাগুলো কীভাবে ছন্দবদ্ধভাবে সংকুচিত হয়ে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনুকরণ করে তার তথ্য সংগ্রহ করে। এই বায়োচিপের একটা সেট ইন্টারন্যাশানাল স্পেস স্টেশনে আর এক সেট পৃথিবীতে রাখা হয়। গবেষকরা দেখেন হৃৎপিণ্ডের দুটো বিটের মধ্যে এক সেকেন্ডের মতো সময়ের পার্থক্য থাকে, স্পেস স্টেশনে থাকা নমুনার কলাতে প্রায় পাঁচগুণ বেশি সময়ের পার্থক্য থাকে। কিন্তু পৃথিবীতে সেই নমুনা ফিরিয়ে এনে দেখা গেছে তা প্রায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। স্পেস স্টেশনে রাখা কোশগুলোর মাইটোকন্ড্রিয়ার আকার আলাদা, তাতে ভাঁজ কম থাকে যে ভাঁজ এদের শক্তি তৈরি করতে ও তা ব্যবহার করতে সাহায্য করে। হৃদপেশির কোশের প্রোটিন বাণ্ডিল সংকোচনে সাহায্য করে, স্পেস স্টেশনে এগুলোর আকার ছোটো হয় ও তা অনিয়ন্ত্রত অবস্থায় থাকে। এখানে থাকা কলায় প্রদাহজনক জিন বেশি তৈরি হয়, ফ্রি র‍্যাডিকালস, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই সমস্যাগুলো বয়সকালীন হৃদরোগের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায়, তেমন মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরে এলেও দেখা যায়। এই পরীক্ষাগুলো নিম্ন আর্থ অরবিট (LEO) পেরোলে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য সৌর এবং মহাজাগতিক রশ্মির ঝুঁকি মূল্যায়ন করবে।