মহাবিশ্বের সুদূর দেশে তারকার জন্ম

মহাবিশ্বের সুদূর দেশে তারকার জন্ম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ জানুয়ারী, ২০২৫

তারারা জন্মায়, তারারা মরে। কীভাবে তাদের মৃত্যু ঘটে তা নিয়ে চর্চা করে তাদের জন্মবৃত্তান্ত জানার একটা পথ বার করেছেন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীরা। গ্যালাক্সিগুলোর একেবারে গভীর ঘন অঞ্চলে আণবিক গ্যাসের মেঘপুঞ্জ চুপসে গিয়ে আর টুকরো টুকরো হয়ে গিয়ে তারকা তৈরি হয় । গ্যাসের পরিমাণটা যখন যথেষ্ট গরম আর ঘন হয়ে ওঠে তখন তা হাইড্রোজেন পোড়াতে আরম্ভ করে আর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে – আর তখনই জন্ম নেয় তারকা। তারকাদের মৃত্যু হয় অতি উজ্জ্বল প্রকাণ্ড বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। তাকে বলে সুপারনোভা। কিছু কিছু সুপারনোভা আবার তীব্র বেগে বস্তুপ্রবাহ নির্গত করে, তা থেকে বেরিয়ে আসে গামা রশ্মি। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে গামা রশ্মি বিস্ফোরণ। এই সুপারনোভা এবং গামা রশ্মি বিস্ফোরণ বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি ইতালির ত্রিয়েস্তে-র জাতীয় নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান সংস্থার বিজ্ঞানীরা “প্রাথমিক ভর ক্রিয়া” (ইনিশিয়াল মাস ফাংশান”) বলে একটা জিনিস নির্ণয় করতে পেরেছেন। গঠিত হবার পর তারাদের ভর কীভাবে ছড়িয়ে থাকে তার হিসেবটা এখান থেকে পাওয়া যায়। পরিমানকগুলি (প্যরামিটার) হিসেব করবার জন্য কম্পিউটারের কিছু সুপরিচিত কৌশল কাজে লাগিয়ে তাঁরা মহাবিশ্বের এমন সব দূরবর্তী অঞ্চলের “প্রাথমিক ভর ক্রিয়া” নির্ণয় করতে পেরেছেন যা দূরবীক্ষণ দিয়ে দেখা অসম্ভব। বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে মহাকাশের অত দূরবর্তী অঞ্চলেও তারকাগুলির “প্রাথমিক ভর ক্রিয়া” আমাদের নিকটবর্তী অঞ্চলের মতোই। এখান থেকে একটা ধারণা দানা বাঁধছে যে হয়তো গোটা মহাবিশ্ব জুড়ে তারকা গড়ে-ওঠার একটাই সুষম নিয়ম ক্রিয়া করে। প্রশ্ন জাগছে, তাহলে কি মহাবিশ্ব জুড়ে একটা তারকা গড়ে ওঠার কোনো একটা সর্বজনীন ধ্রুবকের অস্তিত্ব আছে? কেননা, বিস্ফোরণের চরিত্র কেমন হবে তা নির্ভর করে তারকার বস্তুভরের ওপর। কাজেই তারকার বস্তুভর ঠিক কত, তারই ওপর নির্ভর করবে মহাবিশ্বে ওইরকম বিস্ফোরণ কতগুলো ঘটবে। আর ঠিক এইখানেই “প্রাথমিক ভর ক্রিয়া” (ইনিশিয়াল মাস ফাংশান) নামক এই প্রস্তাবিত ধ্রুবকটির গুরুত্ব। বিষয়টিকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারলে জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটবে। যথা, তারকার জন্ম ও বিকাশ, মহাবিশ্বের রাসায়নিক সমৃদ্ধিকরণ, কৃষ্ণ গহ্বরগুলির মধ্যে সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন অভিকর্ষ তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ। মুশকিল হচ্ছে, মহাকাশের অত দূরের তারকাগুলি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে এখনি এটা যাচাই করবার মতো উপযুক্ত প্রকৌশল ও যন্ত্রপাতি মানুষের হাতে নেই। “প্রাথমিক ভর ক্রিয়া”র ধ্রুবকের ধারণাটা সত্যি কিনা ভবিষ্যতে তা হয়তো জানা যাবে ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ আর ইউক্লিড প্রভৃতি অতি উন্নত দূরবীক্ষণের পর্যবেক্ষণ থেকে।
সূত্র: 28 September 2024, Universe.
DOI: 10.3390/universe10100383

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − seven =