মহাসাগরের গভীরে তীব্র তাপপ্রবাহ

মহাসাগরের গভীরে তীব্র তাপপ্রবাহ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সামুদ্রে তাপপ্রবাহ আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং গভীর জলে তা আরও তীব্র হতে পারে- এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। এই তাপপ্রবাহ সমুদ্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী সংবেদনশীল সামুদ্রিক প্রজাতির ক্ষতির সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। শিল্প যুগের শুরু থেকেই মানুষের বিবিধ ক্রিয়াকলাপ থেকে কার্বন দূষণের ফলে উত্পাদিত অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০% মহাসাগরগুলো শোষণ করছে। সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের ফলে জলের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে এবং আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে যে সমস্ত সামুদ্রিক প্রজাতি এই অসহনীয় উষ্ণ জল থেকে বাঁচতে স্থানান্তরিত হতে পারে না, যেমন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রবাল এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের শৈবালের উপর গুরুতর প্রভাব পড়ছে।
নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে গবেষক এলিজা ফ্রাগকোপোলু বলেন সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ এবং তাদের প্রভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উপর অধ্যয়ন করা হয়েছে কিন্তু গভীর সমুদ্রে তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গবেষকদের তেমন ধারণা ছিল না। ১৯৯৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গবেষকরা ভূপৃষ্ঠের ২০০০ মিটার নীচে বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তারা দেখেন যে ভূপৃষ্ঠের ৫০ থেকে ২০০ মিটার নীচে তপপ্রবাহের তীব্রতা সর্বোচ্চ, এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভূপৃষ্ঠের তাপপ্রবাহের তুলনায় ১৯% বেশি শক্তিশালী। দেখা গেছে যে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পরও, দু বছর পর্যন্ত উষ্ণতা অব্যাহত থাকতে পারে আর তা সমুদ্রের গভীরতার সাথে সময়কালে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্র্যাগকোপোলুর মতে সম্ভবত ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৫০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত জীববৈচিত্র্যের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। আটলান্টিক মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরে ১০০০ থেকে ২০০০ মিটারের মধ্যকার এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নেচার জার্নালে পূর্বে প্রকাশিত একটি পৃথক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে কিছু সামুদ্রিক প্রাণী অন্যদের তুলনায় ভালোভাবে তাপ সহ্য করতে পারে, কিছু সামুদ্রিক মাছের সংখ্যার উপর এই তাপপ্রবাহের কোনো বড়ো প্রভাব পড়ে না। পর্যটন এবং মৎস্য চাষের উপর সম্ভাব্য প্রভাব জানতে মহাসাগরের গভীর তাপপ্রবাহের উপর আরও গবেষণার প্রয়োজন। গভীর সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের উপর সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের প্রভাব এখনও অনেকাংশে অজানা, এই তথ্য বিবেচনা করে, তাদের প্রভাব বোঝার জন্য বিশ্ব মহাসাগরের আরও গভীর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 15 =