মহিলাদের হৃদরোগের ঝুঁকি

মহিলাদের হৃদরোগের ঝুঁকি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ জুন, ২০২৪

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন পুরুষেরা। এই ধারণা ঠিক নয়। অন্তত তেমন কথাই জানাচ্ছে চিকিৎসকেরা। গবেষণা জানাচ্ছে যে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন পুরুষ এবং মহিলাদের ভিন্নভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। গবেষণা এও বলছে মহিলাদের তুলনামূলকভাবে কম রক্তচাপ থাকলে অথবা তাদের রক্তচাপ স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত সীমার মধ্যে পড়লেও তাদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যদিও গবেষণা ঘিরে এখনও কাজ চলছে তবে গবেষকরা মনে করেন পুরুষ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত নির্দেশিকার সুপারিশ সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে আবার দেখা প্রয়োজন। দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় অর্ধেকের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা একমত যে উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, গর্ভাবস্থার জটিলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। যদিও সামগ্রিকভাবে মহিলাদের তুলনায় বেশি সংখ্যক পুরুষদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে – প্রায় ৫১% পুরুষ এবং ৪০% মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে- তবে ৬০ বছর বয়সের পরে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার প্রকৃতপক্ষে বেশি। এর কারণ, মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বেঁচে থাকে, আর তাই বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মহিলাদের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় বেশি। প্রজননক্ষম সময়ে নারীর ‘করোনারি হার্ট ডিজিজ’-এ আক্রান্ত হওয়ার ভয় কম। তখন মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন ঠিক থাকে। হৃদরোগ সামলে রাখে সেই হরমোন। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে হৃদরোগ বাসা বাঁধে নারীর শরীরে। অত্যধিক মানসিক চাপ, কর্মব্যস্ত জীবন, সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া— দৈনন্দিন যাপনের মধ্যেই নিহিত থাকে হৃদরোগের কারণ।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি ১২০/৮০ মিমি এইচজির নীচের স্তরকে স্বাভাবিক এবং ১৩০/৮০ মিলিমিটার পারদ (মিমি এইচজি) বা তার বেশি উচ্চ রক্তচাপ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। এই নির্দেশিকা পুরুষ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে একই। কিন্তু ২০২১ সালে সার্কুলেশন নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। গবেষকরা প্রায় ২৮০০০ মানুষের সিস্টোলিক রক্তচাপের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। গড়ে ২৮ বছরের ফলো-আপে, গবেষকরা দেখেছেন যে ১০০ থেকে ১০৯ মিমি এইচজি-এর সিস্টোলিক রক্তচাপ সহ মহিলাদের – যা বর্তমানে স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত সীমার মধ্যে রয়েছে – ১৩০ থেকে ১৩৯ মিমি এইচজি-র সিস্টোলিক চাপ সহ পুরুষদের তুলনায় কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বেশি। সুতরাং বলা যায় যে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের নর্মাল বা স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ কিছুটা কম থাকে। গবেষণার ফলাফল অনুসারে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা কম, এবং সেটাই বিবেচনা করা উচিত। সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৩০ মিমি এইচজি-তে পৌঁছলে তবেই ওষুধ বা জীবনধারা পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে ওই উর্দ্ধ সীমারেখায় রক্তচাপ না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা – উচ্চ রক্তচাপের চিকিত্সার জন্য মহিলাদের অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন।