মাইক্রোরোবট চালাচ্ছে এককোশী উদ্ভিদ

মাইক্রোরোবট চালাচ্ছে এককোশী উদ্ভিদ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ জুলাই, ২০২৪

১৯৫৯ সালে, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী, রিচার্ড ফাইনম্যান, কল্পনা করেছিলেন মাইক্রোরোবট আমাদের রক্তপ্রবাহের মধ্য দিয়ে সাঁতার কেটে আমাদের আভ্যন্তরীণ অসুখ সারাবে, ওষুধ সরবরাহ করবে। এর পঁয়ষট্টি বছর পরে তা বাস্তব হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এঞ্জিনিয়াররা বাইরের শক্তি উৎস ছাড়াই ক্ষুদ্র মাইক্রোস্কোপিক কাঠামোকে মোটরাইজ করার উপায় বের করেছেন। রক্তের মধ্যে দিয়ে যে মাইক্রোরোবট যাবে, তা এত ক্ষুদ্র যে রক্তের সান্দ্রতা এই রোবটের কাছে গুড়ের মতো ঘন লাগবে। এতে তাদের চলাফেরা আটকে যাব। তাদের চলাফেরা বজায় রাখতে এমন মোটর লাগানো দরকার যা রক্তের মধ্যে দিয়ে সহজেই যেতে পারবে। গবেষকরা মুক্ত, চলাচল করতে পারে এরকম এককোশী জীবের দল ঘোড়ার মতো মাইক্রোরোবটের সাথে জুড়ে দিয়েছেন, যা তাকে ছুটিয়ে নিয়ে চলবে। এই রোবটের ঘোড়া হল এককোশী শৈবাল ক্ল্যামাইডোমোনাস। অন্যান্য মাইক্রোরোবটের চলাফেরার জন্য চুম্বকীয় শক্তি বা তড়িৎ শক্তি লাগে। কিন্তু ক্ল্যামাইডোমোনাস নিজেই চলাফেরা করে। এই গবেষণা স্মল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সবুজ শৈবাল ক্ল্যামাইডোমোনাস রেইনহার্ডটি-র দ্রুত সাঁতারের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে, জাপানের এঞ্জিনিয়াররা এই দারুণ সমাধান এনেছেন। ক্ল্যামাইডোমোনাস মানুষের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়। একটা বিশেষভাবে ডিজাইন করা ঝুড়ির ভিতরে এদের আটকে রেখে, কোশের ফ্ল্যাজেলা সামনের দিকে বের করে রাখা থাকে। এদের বেঞ্চি দ্য টাগবোটের সাথে যুক্ত করা থাকে। এই শৈবালের প্রতিটা কোশ প্রস্থে মাত্র ১০ মাইক্রোমিটার, যা বেঞ্চি দ্য টাগবোটের আকারের এক তৃতীয়াংশ। বিশ্বের এই সবচেয়ে ছোটো রোবট ২০২০ সালে ত্রিমাত্রিক প্রিন্ট করা হয়েছে। এই শৈবাল তাদের নিজস্ব আকারের পাঁচগুণ বড়ো মেশিন টানতে পারে। এদের দুটো ফ্ল্যাজেলা, রোবটকে ব্রেস্টস্ট্রোকের মতো এগিয়ে নিয়ে যায়। ফ্ল্যাজেলা প্যাডেল করার সময় পেছনের রোবটটাকে টেনে আনে। তাদের এই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে জটিল মাইক্রোমেশিন বিকাশের এক নতুন দিগন্ত খুলে গেল।
গবেষকরা দুধরনের যান ব্যবহার করেছিলেন। একটা যান স্কুটারের মতো যাতে একই দিকে দুটো ক্ল্যামাইডোমোনাস ফিট করা হয়েছিল। এই যন্ত্রের পুরুত্ব মাত্র ৫০-৬০ মাইক্রন, যেখানে মানুষের একটা চুলের পুরুত্ব ১০০ মাইক্রন। চাকার মতো আর একটা যন্ত্রে ৪ টে ক্ল্যামাইডোমোনাস ফিট করা হয়েছিল। এটা বেশ ভালো ঘুরছিল। এই পদ্ধতির সাহায্যে ভবিষ্যতে জলজ পরিবেশ পর্যবেক্ষণ এবং অণুজীব ব্যবহার করে পদার্থ পরিবহনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেমন জল থেকে দূষক বা পুষ্টিকর পদার্থ সরানো।