মাছও সন্তানদের শাস্তি দেয়

মাছও সন্তানদের শাস্তি দেয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ জুন, ২০২৪

শিশুদের মারধোর, বকাঝকা তাদের সুস্থ বিকাশের অন্তরায়, ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে এই প্রচারের ফল স্কুল, তার গণ্ডি ছাড়িয়ে বাবা-মায়েদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মাছ কিন্তু এসব কথা মানতে নারাজ। ওসাকা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির রিও হিদাকা, শুম্পেই সোগাওয়া, মাসানোরি কোহদা এবং সাতোশি আওয়াটা দেখিয়েছেন যে এক ধরনের মাছের প্রজাতি তাদের সন্তানদের কাজ করানোর জন্য শারীরিক শাস্তি দেয়। তারা বলছেন এই ঘটনা উন্নত সামাজিক এবং জ্ঞানীয় দক্ষতা নির্দেশ করে যা উচ্চ মেরুদণ্ডী প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হত। তাদের গবেষণার ফলাফল এনিম্যাল বিহেভিয়ার জার্নালে অনলাইনে প্রকাশিত হয়।
সহস্রাব্দ ধরে, মানুষ সহযোগিতা, সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হাতিয়ার হিসেবে শাস্তি ব্যবহার করে এসেছে। প্রকৃতিতে অন্যান্য প্রজাতিও সহযোগিতামূলক আচরণের খোঁজ করে থাকে। ওসাকা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ সায়েন্সের গবেষকরা এক ধরনের সিচলিড মাছ, নিওলামপ্রোলগাস স্যাভোরি -তে এই আচরণের খোঁজ পেয়েছেন। এন. স্যাভোরি মাছের ঝাঁক মুখ্য প্রজননকারীদের, অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে এলাকা রক্ষা করতে বা প্রজননের আশ্রয়স্থল বজায় রাখতে সাহায্য করে। একটি নিয়ন্ত্রিত ল্যাবরেটরিতে গবেষকরা তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখেন প্রজননকারীরা অন্যান্যদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য নিষ্ক্রিয় মাছ যারা বিশেষ সাহায্য করছিল না, তাদের শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছিল, এমনকি তাদের নিজের সন্তানদের দিকেও তেড়ে যাচ্ছিল। আর যে মাছেরা এই ধরনের আগ্রাসনের সম্মুখীন হয়েছে তারা এরপর সাহায্য করার প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে। যে মাছেরা সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে যাচ্ছিল, তাদের দিকে প্রজননকারীরা কিন্তু মোটেও তেড়ে যায়নি।
গবেষকদের বক্তব্য আচরণ ঠিক করার জন্য মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণীর মধ্যে শাস্তি দেওয়ার চল রয়েছে। এই গবেষণাটি সমবায় আচরণের বিবর্তন আর এই আচরণ বজায় রাখার জন্য প্রাণীরা যে প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহার করে তা বোঝার ক্ষেত্রে ফাঁক ভরাট করে। তাদের অনুসন্ধান বলছে মাছ, মানুষের মতো, তাদের সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য উন্নত জ্ঞানীয় ক্ষমতা কাজে লাগায়। আর এই গবেষণা শুধুমাত্র মাছ নয়, প্রাণীজগত জুড়ে ‘বুদ্ধিমত্তা’র ধারণাকে পুনর্বিবেচনা করে দেখতে বলে।