মাছের স্থির ভাসমান দশা

মাছের স্থির ভাসমান দশা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ জুলাই, ২০২৫

প্রায়ই দেখি, জলের মধ্যে কোনো মাছ এক জায়গায় স্থির অবস্থায় রয়েছে। যেন মনে হয়, তারা বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু ইউসি সান ডিয়েগোর, স্ক্রিপস মহাসাগর বিজ্ঞান সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের এই স্থির ভেসে থাকাকে বিশ্রামের অবস্থা বলা যায় না। বরং এই প্রক্রিয়ায় তাদের জটিল পাখনা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে। শরীরকে অত্যন্ত সক্রিয় রাখতে হয়। তাতে মাছগুলিকে সাধারণ অবস্থার চেয়ে দুই গুণ বেশি শক্তি খরচ করতে হয়। আগে ধারণা ছিল, মাছের দেহের “সুইম ব্লাডার” নামের গ্যাস-ভরা থলি মাছকে নিরপেক্ষ ভাসমান অবস্থায় রাখে বলেই তারা কম প্রচেষ্টাতে এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে। সুতরাং এটিকে এক ধরনের বিশ্রাম হিসেবেই ধরা হত। কিন্তু প্রধান গবেষক ভ্যালেন্টিনা দি সান্টো ও তার দল অন্য কথা বলছেন। তাঁরা ১৩ ধরনের মাছ নিয়ে উচ্চ গতির ক্যামেরা ও অক্সিজেন সেন্সর ব্যবহার করে এক গবেষণা চালান। তাতে দেখা যায়, স্থিরভাবে ভাসমান অবস্থায় মাছের পাখনা দ্রুত এবং ছোট ছোট গতিতে নড়াচড়া করে। তাতেই এরা এই স্থির অবস্থান ধরে রাখতে পারে। প্রকৃত গতিহীন বিশ্রামের দশায় এরা চৌবাচ্চার তলায় ভর রেখে স্থির হয়ে থাকে। এই দুই দশায় অক্সিজেন ব্যবহারের তুলনাত্মক পরিমাপ থেকে দেখা যায়, স্থির ভাসমান দশায় মাছ দুই গুণ বেশি শক্তি খরচ করে। মাছের ভর কেন্দ্র এবং প্লবতা কেন্দ্র (centre of buoyancy) সাধারণত একে অপরের থেকে আলাদা। এর ফলে মাছের শরীর অসমতল হয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে। পাখনার সাহায্যে ছোট ছোট সঙ্কোচন ও ঘূর্ণনের মাধ্যমে তারা সেটা ঠিক রাখে। এই ক্রমাগত সমন্বয়ের দরুন ভাসমান স্থির দশায় শক্তি-খরচ হয় বেশি। মাছের দেহের আকৃতি ও মধ্যবিন্দুর দূরত্ব যত বেশি হবে, তত বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, সমান আকৃতির মাছের তুলনায় ভারসাম্য বজায় রাখতে এদের বেশি পরিশ্রম করতে হয়, তাই এদের শক্তি খরচ বেশি। এই প্রক্রিয়া মোটেও শান্ত বা ধীর নয়। এটি একটি একটানা সক্রিয় পাখনা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া। গবেষণাটি জলের নীচে বা ভিতরে ড্রোন বা রোবট নকশায়নে নতুন দিক নির্দেশ করে। মাছেদের এরকম পাখনা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে কম শক্তির ও স্থিতি নিয়ন্ত্রক উন্নত রোবট তৈরি সম্ভব হবে।

সূত্র: Proceedings of the National Academy of Sciences (July 7, 2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × two =