মাটির নীচে ২০০ কোটি বছরের পুরোনো জীবন্ত অণুজীবের সন্ধান

মাটির নীচে ২০০ কোটি বছরের পুরোনো জীবন্ত অণুজীবের সন্ধান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ অক্টোবর, ২০২৪
কোটি বছরের পুরোনো

২০০ কোটি বছরের পুরানো জীবন্ত জীবাণুর সন্ধান পাওয়া গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বুশভেল্ড ইগনিয়াস কমপ্লেক্সে পাথর খোঁড়ার সময় শিলার একটা বদ্ধ ফাটলের মধ্যে এই জীবন্ত অণুজীবের সন্ধান মিলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই এলাকা তার সমৃদ্ধ আকরিকের জন্য পরিচিত। পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচে ম্যাগমা ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে এই শিলা গঠিত হয়েছে। এই অঞ্চল আনুমানিক ৬৬০০০ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। যা আকারে প্রায় আয়ারল্যান্ডের সমান, এর পুরুত্ব কোনো কোনো স্থানে ৯ কিমি অবধি হতে পারে। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী আকরিকগুলো পাওয়া যায়, পৃথিবীর ৭০% প্ল্যাটিনাম এই অঞ্চলেই পাওয়া যায়। এখন অবধি আবিষ্কৃত প্রাচীন শিলার মধ্যে জীবাণুর এটা প্রাচীনতম উদাহরণ। গবেষকরা খনন কাজের সময় মাটির প্রায় ১৫ মিটার নীচ থেকে ৩০-সেন্টিমিটার-লম্বা কোর শিলার নমুনা পেয়েছেন। শিলার পাতলা টুকরো টুকরো করে কেটে বিশ্লেষণ করার সময়, তারা জীবন্ত জীবাণুর কোশগুলো পাথরের ফাটলে ঠাসাঠাসিভাবে অবস্থান করছে, তা দেখতে পান। এই ফাটলগুলোর কাছাকাছি যে কোনও ফাঁক কাদামাটি দিয়ে আটকে গিয়েছিল, যাতে কোনো জীব বাইরে বেরোতে পারবেনা বা ভেতরে প্রবেশও করতে পারবেনা। গবেষকরা তিন ধরনের ইমেজিং – ইনফ্রারেড স্পেকট্রো স্কোপি, ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি এবং ফ্লুরোসেন্ট মাইক্রোস্কোপির সাহায্যে নিশ্চিত হয়েছেন, জীবাণুগুলো প্রাচীন মূল নমুনা আর পরবর্তীতে এরা অন্য কিছুর সংস্পর্শে আসেনি।
পৃথিবীর গভীরে প্রাচীন, জীবন্ত জীবাণুর উপনিবেশগুলো ভূপৃষ্ঠের অনেক নীচের শিলাতে বাস করে। এরা নানভাবে হাজার হাজার, এমনকি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বেঁচে থাকতে পারে। এই ক্ষুদ্র, স্থিতিস্থাপক জীবের জীবনযাপন খুব ধীর গতির। তাই এরা ভূতাত্ত্বিক সময়ের ব্যবধানে খুব কমই বিকশিত হয়। এই কারণে গবেষকরা সেই প্রাচীন সময়কে ফিরে দেখার সুযোগ পান। এর আগে সবচেয়ে প্রাচীন প্রাণের নমুনা পাওয়া গিয়েছিল, মহাসাগরের নীচে যা ১০ কোটি বছরের পুরোনো ছিল। ইউনিভার্সিটি অফ টোকিওর গ্রাজুয়েট স্কুল অফ সায়েন্সের গবেষকরা জানিয়েছেন,বর্তমান শিলায় পাওয়া জীবাণুগুলোর ডিএনএ ও জিনোমের ওপর গবেষণা তাদের জীবনের প্রাথমিক বিবর্তনকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। সেইসাথে মঙ্গল গ্রহ থেকে নিয়ে আসা সমসাময়িক শিলা থেকে বহির্জাগতিক জীবনের সন্ধান করতে সাহায্য করতে পারে।