মানবকল্পনার সীমা

মানবকল্পনার সীমা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

একসাথে কয়েকটি বল আকাশে ছুঁড়ে দেওয়া হল। যত মনোযোগই দেওয়া হোক না কেন, এক সময় অন্তত একটি বলের খোঁজ ঠিক রাখা যাবে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ছোট্ট খেলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানবকল্পনার সীমাবদ্ধতার ইঙ্গিত। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, মানুষ কল্পনার ভেতর খুব বেশি হলে দুটি চলমান বস্তু একসাথে অনুসরণ করতে পারে। চোখের সাহায্যে আমরা একাধিক বস্তু ট্র্যাক করতে পারলেও, কল্পনার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট। গবেষকরা এর জন্য তৈরি করেন নতুন এক পরীক্ষামূলক পদ্ধতি, ‘কাল্পনিক বস্তুর গতিপথ অনুসরণ ‘ (IOT) করার কাজ। অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে দেখানো হয় বস্তুসমূহের অ্যানিমেশন। কিছুক্ষণ পর দৃশ্য থামিয়ে দিয়ে তাদের বলা হয়, মনের মধ্যে বস্তুগুলির গতিপথ কল্পনা করতে এবং সময় নির্ধারণের ভিত্তিতে ফলাফল অনুমান করতে। এই পরীক্ষার ফলাফলকে তুলনা করা হয়েছিল তিন ধরনের কম্পিউটার মডেলের সঙ্গে। ১. সমান্তরাল মডেল- যেখানে ধরা হয় মানুষ একাধিক বস্তু একসাথে কল্পনা করতে পারে। ২. একাদিক্রমিক (serial)মডেল – এখানে ধারণা, মানুষ একসময়ে কেবল একটি বস্তুর পথ কল্পনা করে, তারপর পরেরটিতে যায়। ৩. মধ্যবর্তী (Interleaved ) ধারণা করা হয়, মানুষ আগের দুই মডেলের মিশ্রণ ঘটায়। অর্থাৎ কল্পনায় কখনও একটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, আবার মাঝেমধ্যে অন্যটির দিকে সরে যায়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, দেখা গেল, কোনো মডেলই বাস্তব ফলাফলের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। কাজেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, মানুষ কল্পনার মধ্যে সর্বোচ্চ দুটি বস্তু একসাথে অনুসরণ করতে পারে। সহলেখক টোমার ডি. উলম্যান জানালেন, “আমরা কল্পনার ক্ষমতার সীমা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম। ফলাফল দেখাল, সেটি প্রায় এক বা দুইয়ের বেশি নয়।” অর্থাৎ চোখে যা আমরা একসাথে অনায়াসে ধরতে পারি, কল্পনার জগতে তা আর সম্ভব হয় না। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এমন হয়? বহু বস্তুর গতিপথ অনুসরণ (MOT) প্যারাডাইম থেকে বোঝা যায়, মানুষ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বস্তুকে সরল নিয়মে কল্পনা করে। যেমন, একটি বল টেবিলের উপর দিয়ে গড়ালে মনে হয় এটি একই গতিতে সোজা এগিয়ে যাবে। কেউ কেউ কাল্পনিক সিমুলেশন ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ধাপে ধাপে কল্পনায় গতিপথ পুনর্নির্মাণ করেন। কিন্তু যত বেশি বস্তু যোগ হয়, ততই নিখুঁত হিসাব ব্যাহত হয়। এই ফলাফল কেবল মানসিক কল্পনার সীমার কথাই জানায় না। বরং মানব মস্তিষ্ক কীভাবে চলমান পরিবেশে পরিকল্পনা, পূর্বাভাস বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাও বোঝায়। বাস্তব জীবনে যখন একসাথে একাধিক পরিবর্তনশীল উপাদানের মোকাবিলা করতে হয়, তখন আমাদের চিন্তাশক্তি মূলত এক বা দুটি গতিশীল উপাদানের দিকেই সবচেয়ে কার্যকরভাবে কাজ করে।

অর্থাৎ, মানুষের কল্পনা একসময়ে সবকিছু আঁকড়ে ধরতে পারে না। কয়েকটি অবশ্যম্ভাবীভাবেই ফসকে যায়। মনে করিয়ে দেয়, আমাদের মানসিক মঞ্চেরও রয়েছে সীমানা।

 

সূত্র : The capacity limits of moving objects in the imagination by Halely Balaban, et.al ; Nature Communications(01 July, 2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − six =