
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে মানব-মস্তিষ্কের সমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা সম্ভব নয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাকে উন্নত করলেও তা মানব-তুল্য বুদ্ধিমত্তা অর্জন করতে পারবে না। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মূল প্রযুক্তি স্নায়বিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও একা মানুষের মতো চিন্তা করতে সক্ষম নয়। গবেষক ফ্রান্সেসকা রোসি মনে করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানুষের মতো বুদ্ধিমান করা উচিত কি না, তা নিয়েও বিশদ আলোচনা দরকার । তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিকল্প হওয়া উচিত নয়, বরং এটি যেন মানুষের বিকাশ ও উন্নতিতে সাহায্য করে। এই সমীক্ষার ফলাফল পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় এএএআই-এর বার্ষিক সভায় পেশ করা হয়। এতে ৪৭৫ জনের বেশি সদস্যের মতামত অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ ছিলেন শিক্ষাবিদ। জেনারেটিভ এআই এমন একটি প্রযুক্তি যা চ্যাটবট বা ছবি তৈরি করার মতো কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি নিউরাল যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করে, যা মানুষের মস্তিষ্কের মতো অনেক তথ্য থেকে শিখতে পারে। গত দশকে, বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করতে এর আকার সম্প্রসারণ করেছেন। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও বেশি তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ও এমন কিছু নির্ধারক / নিয়ন্ত্রক যোগ করেছেন, যার মাধ্যমে এটি শেখার সময় নিজেই পরিবর্তন করতে পারে। প্রায় ৮৪ শতাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন শুধু নিউরাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে মানুষের মতো বুদ্ধিমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) তৈরি করা সম্ভব নয়। এজিআই অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম সার্বিক বুদ্ধিমত্তা) বলতে এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বোঝানো হয়, যা মানুষের মতো সব ধরনের চিন্তাশক্তির কাজ করতে পারে বা তাকে অতিক্রম করতে সক্ষম। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নির্ধারণ করেননি, কীভাবে বোঝা যাবে যে কৃত্রিম সার্বিক বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) সত্যিই তৈরি হয়েছে।এআইএআই-এর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শুধুমাত্র নিউরাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা যথেষ্ট নয়, অন্য প্রযুক্তিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে একটি পুরনো পদ্ধতি রয়েছে, যাকে বলা হয় প্রতীকী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (সিম্বলিক এআই )। এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) শেখানোর জন্য বিশাল পরিমাণ পরিসংখ্যানগত তথ্য ব্যবহার না করে সরাসরি কিছু নিয়ম নির্দেশনা করা হয়।৬০শতাংশের এর বেশি বিশেষজ্ঞ মনে করেন , মানুষের মতো চিন্তাশক্তি অর্জন করতে হলে নিউরাল যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি এই পদ্ধতিকেও যুক্ত করতে হবে। গবেষক রোসি বলেন, নিউরাল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি আরও উন্নত করতে হলে অন্যান্য পদ্ধতির সহায়তা নিতে হবে।সমীক্ষায় দেখা গেছে, কৃত্রিম সার্বিক বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) তৈরির বিষয়ে অনেকেই চিন্তিত। ৭৫ শতাংশের বেশি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উন্নয়নের সাথে সাথে এর ঝুঁকি ও সুবিধা ঠিকভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। শুধুমাত্র ২৩শতাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন,কৃত্রিম সার্বিক বুদ্ধিমত্তা ( এজিআই) তৈরি করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হওয়া উচিত।এছাড়া, প্রায় ৩০শতাংশ বিশেষজ্ঞের মতে যতক্ষণ না নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে কৃত্রিম সার্বিক বুদ্ধিমত্তাকে (এজিআই) সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং এটি মানুষের উপকারে আসবে, ততক্ষণ এ নিয়ে গবেষণা বন্ধ রাখা উচিত।তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ এ গবেষণা বন্ধ করার বিপক্ষে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করাও কঠিন হবে।যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের এআই গবেষক এবং এএআইএআই-এর সদস্য অ্যান্থনি কোহেন বলেন গবেষণা সংস্থাগুলো আর্থিক সাহায্য বন্ধ করলেও কোম্পানিগুলো কৃত্রিম সার্বিক বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে।তিনি মনে করেন এ জিনিস খুব দ্রুত আসছে না,তাই এর নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করার জন্য এখনও সময় আছে।