মানব মস্তিস্ক কীসে আলাদা?

মানব মস্তিস্ক কীসে আলাদা?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মানুষের মস্তিষ্ক প্রকৃতির সবচেয়ে জটিল কাঠামোগুলির মধ্যে একটি। এই মস্তিষ্কই আমাদের প্রজাতিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন গবেষণায় মস্তিষ্কের বিকাশে প্রভাব বিস্তারকারী জিনগত পরিবর্তনগুলির খোঁজ করা হয়েছে। হিউম্যান অ্যাক্সিলারেটেড রিজিয়ন (এইচ এ আর এস) পরীক্ষা করে গবেষকরা আবিষ্কার করতে পেয়েছেন কীভাবে এই জিনগত পরিবর্তনগুলি জিনের বাহ্যিক ক্রিয়াশীলতাকে সূক্ষ্মভাবে পরিবর্তন করে। এইচ এ আর এস হল আমাদের ডিএনএর এমন কিছু অংশ যা অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এটি মূলত একটি জিন কখন, কোথায় এবং কতটা সক্রিয় হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। আগে ধারণা ছিল শিম্পাঞ্জির তুলনায় এইচ এ আর এস মানুষের বিভিন্ন জিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু একটি নতুন গবেষণায় অন্য চিত্র ধরা দিয়েছে। এইচ এ আর এস মূলত কোন জিন ব্যবহার করা হবে তা নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে একই জিনের সক্রিয়তার মাত্রা পরিবর্তন করে । এটি মস্তিষ্কের কোষ (নিউরন) কীভাবে বিকাশ, বৃদ্ধি এবং যোগাযোগ করে সেগুলিকে প্রভাবিত করে। এর প্রভাবে জিনের কার্যকলাপের এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলি সম্ভবত আমাদের মস্তিষ্কের বৌদ্ধিক বিকাশে সাহায্য করে। অধ্যাপক জেমস নুনানের নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল, এইচ এ আর এসের জিন এবং নিউরাল স্টেম কোশের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে দেখার জন্য উন্নত কৌশল ব্যবহার করেছে। এর ফলে তারা প্রায় সমস্ত এইচ এ আর দ্বারা নির্দিষ্ট জিনগুলিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে।এইচ এ আর এস মানুষের মধ্যে নতুন জিন তৈরির পরিবর্তে এটি কীভাবে ব্যবহৃত হয় তা পরিবর্তন করে। অর্থাৎ আমাদের মস্তিষ্ক নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে নয়, বিদ্যমান পথগুলিকেই সূক্ষ্মভাবে সুরক্ষিত করে বিকশিত হয়েছে। বিবর্তনে এইচএআর এর ভূমিকা বোঝার জন্য কোন জিনগুলি এইচএআর-এর দ্বারা প্রভাবিত তা চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ। আগে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে মাত্র ৭-২১% জিন চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছিল। প্রাথমিক পদ্ধতিগুলি ছাড়াও কখনও কখনও নিশানা-করা বস্তুর সনাক্তকরণেও ভুল ছিল। এর ফলে মস্তিষ্কের বিকাশে এইচএআর এর প্রকৃত প্রভাব সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। ইয়েলের গবেষণা দলটি একটি থ্রিডি জিন ম্যাপিং কৌশল ব্যবহার করে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির নিউরাল স্টেম কোষের জিনের সাথে এইচএআর কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে তা পরীক্ষা করেছে । ফলস্বরূপ, তারা প্রায় ৯০ শতাংশ এইচএআর এর জন্য জিনের নিশানা চিহ্নিত করেছে । বিজ্ঞানীরা এখন আরও স্পষ্টভাবে অধ্যয়ন করতে পারবেন কিভাবে এইচএআর মস্তিষ্কের বিবর্তনকে রূপ দিয়েছে। এই অগ্রগতি এইচএআর এর সাথে সম্পর্কিত স্নায়বিক অবস্থাগুলিকে বুঝতেও সাহায্য করতে পারে। প্রাথমিক মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনগুলিকে এইচএআর নিয়ন্ত্রণ করে। যা নিউরনের বৃদ্ধি, স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। কিছু এইচএআর জিন, অটিজম এবং স্কিজোফ্রেনিয়া প্রভৃতি অবস্থার সাথে যুক্ত। এগুলি মস্তিষ্কের বিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা উভয় ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীরা এখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন যে জেনেটিক পরিবর্তনগুলি মস্তিষ্কের বিকাশ, বুদ্ধিমত্তা এবং স্নায়বিক ব্যাধিগুলিকে কীভাবে প্রভাবিত করে। এই গবেষণাটি আমাদের মনুষ্য প্রজাতি হিসেবে আলাদা করে এমন জেনেটিক ভিত্তি অনুধাবন করার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 1 =