মানসিকভাবে ভালো থাকার সহজ উপায়

মানসিকভাবে ভালো থাকার সহজ উপায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

মানসিক রোগীদের নিয়ে একটি ছোটো গবেষণা অনুসারে, দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করলে যেকোনো ব্যক্তি মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো থাকে। যখন আমরা নিজেদেরকে উদ্বুদ্ধ করার কথা চিন্তা করি, তখন আমরা শুধু কায়িক পরিশ্রমের ব্যায়ামের কথা ভাবি যেমন জোরে হাঁটা বা দৌড়ানো, সাঁতার কাটা প্রভৃতি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে শুধুমাত্র বিভিন্ন স্থানে যাওয়া, হতাশায় ভোগা বা উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের মধ্যে সুস্বাস্থ্যের অনুভূতির নিয়ে আসতে সক্ষম। সুইজারল্যান্ডের বাসেলের ইউনিভার্সিটি সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিকের করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তারা যত বেশি বৈচিত্র্যময় স্থান পরিদর্শন করে, তারা তত প্রফুল্ল থাকে বা মানসিকভাবে সুস্থ অনুভব করে। গবেষণাটি ১০৬ জন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর ওপরে করা হয়েছিল যাদের মধ্যে আবেগজনিত ব্যাধি, উদ্বেগজনিত ব্যাধি, মেজাজের সমস্যা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা রয়েছে বা অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। এদের মধ্যে কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আবার কেউ বাইরের রোগী ছিলেন যারা বাড়িতে থাকেন কিন্তু চিকিৎসার জন্য হসপিটালে নিয়মিত যাতায়াত করেন। এক সপ্তাহ ধরে, জিপিএস-এর মাধ্যমে এই রোগীদের গতিবিধি নির্ধারণ করার জন্য তাদের সাথে একটি অতিরিক্ত ফোন দেওয়া হয়। তারা তাদের সুস্থতা, তাদের মনস্তাত্ত্বিক নমনীয়তা এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বেশ কয়েকটি সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। সমীক্ষার ফলাফলের সাথে জিপিএস মানচিত্র তুলনা করে, গবেষকরা দেখেছেন যে স্থান এবং সময়ের সাথে ব্যক্তিদের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত তাদের ভালো থাকার অনুভূতির সাথে যুক্ত, যদিও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার উপসর্গ সেই সব ব্যক্তিদের মধ্যে মূলত একই ছিল।
হাসপাতালে থাকা রোগীদের তুলনায় যে সব রোগীরা বাড়িতে থেকে তাদের চিকিৎসা চালাচ্ছেন তারা দিনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় বাড়িতে থাকলেও বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটিয়েছেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শুধুমাত্র শারীরিক ক্রিয়াকলাপ মানসিক ব্যাধির লক্ষণ হ্রাস করতে যথেষ্ট নয়, তবে মানসিকভাবে ভালো থাকা উন্নত করতে পারে। তবে এই বিষয়ে বেশিরভাগ গবেষণা এখন পর্যন্ত ব্যায়ামের উপর করা হয়েছে। ২০২১ সালে, ৬৭ জন অংশগ্রহণকারীর একটি ছোটো সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন বাস স্ট্যাণ্ড অবধি হেঁটে যাওয়া বা সিঁড়ি বেয়ে উঠলে মানুষ নিজেকে আরও সতর্ক এবং উদ্যমী বোধ করে। অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের স্ক্যান করে দেখা গেছে যে বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করার ফলে তারা আরও উদ্যমী বোধ করেন, তাদের মস্তিষ্কে গ্রেম্যাটারের আধিক্য দেখা যায়– যা আবেগ নিয়ন্ত্রণের সাথে যুক্ত। গবেষকদের মতে বাইরে প্রকৃতির বুকে সময় কাটানো মানুষের জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশু তার শৈশবে প্রকৃতির বুকে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করে বেড়ে উঠলে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়। বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায় ডাক্তাররা মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রকৃতিতে সময় ‘নির্ধারণ’ শুরু করেছেন। সাম্প্রতিক জিপিএস অধ্যয়নটি ছোটো এবং সীমিত ছিল, তবে ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট যে চলনের ধরণ যেমন তার দূরত্ব, গন্তব্যের সংখ্যা, গন্তব্যের পরিবর্তনশীলতা প্রভৃতি কার্যকারিতা এবং সুস্থতার চিহ্নিতকারী হিসাবে কাজ করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − fourteen =