মানসিক অবসাদ ও সেরাটোনিন

মানসিক অবসাদ ও সেরাটোনিন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জুলাই, ২০২৫

আমাদের দীর্ঘদিনের ধারণা মানসিক অবসাদ মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের অভাব বা রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার ফল। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো নতুন কথা বলছে। আধুনিক গবেষণা ইঙ্গিত দেয়, এর মূল কারণ হতে পারে স্নায়ুতন্ত্রের অস্বাভাবিক কার্যপ্রণালী। অর্থাৎ, কেবলমাত্র ওষুধ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হয় না। ২০২২ সালে মলিকুলার সাইকিয়াট্রি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণায় লক্ষাধিক মানুষের ওপর পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, মানসিক অবসাদগ্রস্তদের রক্ত বা মস্তিষ্কের তরলে থাকা সেরোটোনিন মাত্রার সাথে সুস্থ মানুষের বিশেষ পার্থক্য নেই। অথচ, প্রায় ৯০% মানুষের বিশ্বাস, মানসিক অবসাদের কারণ হলো কম সেরোটোনিন বা রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা।
এই ধারণাটি প্রথম ১৯৬০-এর দশকে উত্থাপিত হয়েছিল। ১৯৯০-এর দশকে যখন ওষুধ কোম্পানিগুলো এস এস আর আই(সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর) ধরনের অবসাদরোধক ওষুধ বাজারজাত করা শুরু করে, তখন থেকে এটি চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রচার পায়। এই ওষুধগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে , কৃত্রিমভাবে সেরোটোনিনের মাত্রা কমিয়ে দিলে মানুষের মধ্যে অবসাদ তৈরি হয় না।
গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক, লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক জোয়ানা মনক্রিফ বলেছেন, বহু মানুষ মনে করেন, মানসিক অবসাদ একটি রাসায়নিক সমস্যা, তাই তারা অবসাদরোধক ওষুধ গ্রহণ করেন। কিন্তু বাস্তবে এই বিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে মানুষকে এই সত্য জানানোর যে, মানসিক অবসাদ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা প্রকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিক নয়।
এছাড়া, গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে অবসাদরোধক ওষুধ শুধু নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক আবেগও কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ, মানুষ হয়তো সাময়িক স্বস্তি পেতে পারে কিন্তু এটাই চূড়ান্ত ফল নয়। গবেষকদলের মতে, রোগীদের বলা উচিত নয় যে মানসিক অবসাদ কেবলমাত্র সেরোটোনিন বা রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। কারণ, এখনো জানা যায়নি এই ওষুধগুলো মস্তিষ্কে কীভাবে কাজ করে। ভুল তথ্য দিয়ে রোগীদের বিভ্রান্ত করা উচিত নয়।
আজকের গবেষণা বলছে, অবসাদ শুধু মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ নিঃসৃত রাসায়নিক সংকেতবাহী বা নিউরোট্রান্সমিটারের (সেরাটোনিন) ফল নয়। বরং, এটি জীবনের অভিজ্ঞতা, মানসিক আঘাত, এবং স্নায়ুতন্ত্রের অস্বাভাবিক কার্যপ্রণালী প্রভৃতি কারণ থেকে উৎপন্ন হতে পারে। এই কারণগুলো পরোক্ষভাবে মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন আনতে পারে। অথচ, মূলধারার চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই মানবিক, মানসিক ও সামাজিক কারণগুলো প্রায়শই উপেক্ষিত হয় ।
তথ্যসূত্রঃ Molecular Psychiatry Journal.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − ten =