মানুষের আঙুলছাপ কি অনন্য?

মানুষের আঙুলছাপ কি অনন্য?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ এপ্রিল, ২০২৫

আঙুলের ছাপ এক অনন্য ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য। পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে অপরাধ সমাধান, অনেক কিছুরই নির্ভরযোগ্য উপায়। তবে, ‘প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ আলাদা, একটির সাথে অপরটির মিল নেই’-শতাব্দী প্রাচীন এই ধারণা এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে। সম্প্রতি গবেষকদের একটি দল আবিষ্কার করেছেন যে মাঝে মাঝেই একজন মানুষের সাথে অপরজনের আঙুলের ছাপের বেশ মিল থাকতে পারে ! ধারণাটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা কৃ বু মডেল থেকে পেয়েছেন তাঁরা। কৃ বু একাধিক ব্যক্তির আঙুলের ছাপের মধ্যে অদ্ভুত সংযোগ দেখিয়েছে। কলম্বিয়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের হড লিপসন এবং ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলোর ওয়েন্যাও জু যৌথ উদ্যোগে গবেষণাটি করেছেন। অনেকেই মনে করেন, প্রতিটি আঙুলের রিজ, লুপ এবং সুইরেল আলাদা। এনারা প্রায় ৬০,০০০ আঙুলের ছাপের একটি তথ্য ব্যবহার করে আঙুলের ছাপের জোড়গুলিকে মেলাতে থাকেন। এর মধ্যে কিছু ছাপ-জোড় একই ব্যক্তির ছিল। আবার কিছু ছিল ভিন্ন ব্যক্তির। কৃ বু এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ছাপ চিহ্নিত করতে ৭৭% অভ্রান্ততা অর্জন করে । একাধিক নমুনা একত্রিত হলে এর ‘অভ্রান্ততা’ বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যমান ফরেনসিক পদ্ধতিগুলিকে এটি ১০ গুণেরও বেশি উন্নত করার সম্ভাবনা রাখে। এই আবিষ্কার একেবারে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু গবেষকদের এই প্রকল্পটি একটি প্রতিষ্ঠিত ফরেনসিক জার্নাল দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। নিরুৎসাহিত না হয়ে, গবেষক দল বৃহত্তর পাঠকবর্গের সন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু আবারও তাঁরা প্রত্যাখ্যাত হন। এ ঘটনা প্রধান গবেষক লিপসনকে আরও চ্যালেঞ্জ নিতে উদ্বুদ্ধ করে। “যদি এই তথ্যটি ভারসাম্য বদলে দেয়, তবে আমি কল্পনা করি যে হারিয়ে যাওয়া মামলাগুলি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। এমনকি বহু নিরপরাধ মানুষকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে এই পদ্ধতির মাধ্যমে”।
ঐতিহ্যবাহী ফরেনসিক যাচাই পদ্ধতিগুলি বহু খুঁটি নাটি পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। এটি আঙুলের রিজের শাখা নমুনা এবং প্রান্তগুলিকে নিয়ে কাজ করে । গবেষনার কাজে যুক্ত ছাত্র গুও বলেন, “ কৃ বু এইসব খুঁটি নাটি পদ্ধতি অনুসরণ না করে আঙুলের ছাপের কেন্দ্রের বক্রতা বা ‘সুইরেল’ এবং কেন্দ্রের কোণ বা লুপের কোণ এবং বাঁকগুলির সাথে সম্পর্কিত তথ্য ব্যবহার করে”। এই আবিষ্কার থেকে দেখা যায়, বিশেষজ্ঞরা এতকাল গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলিকে উপেক্ষা করেছেন। সহযোগী গবেষক অনিভ রায় এবং পিএইচডি ছাত্র জুডা গোল্ডফেডার বলেন, “কল্পনা করুন, যখন কৃ বু লক্ষ লক্ষ আঙুলছাপের উপর প্রশিক্ষিত হবে, তখন এটি আরও কত শক্তিশালী হয়ে উঠবে”। তারা লক্ষ্য করেন, তাদের আবিষ্কৃত পদ্ধতি, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমান কার্যকারিতা দেখিয়েছে। তবে আরও বৈচিত্র্যময় আঙুলের ছাপের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব যে আছে, তা তাঁরা জানেন। তারা আশা করেন, তাদের সূক্ষ্ম যাচাই-বাছাই, এই পক্ষপাতিত্বের উদ্বেগ মোকাবেলা করবে ভবিষ্যতে। এই গবেষণার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির হাতে একটি সহায়ক সরঞ্জাম তুলে দেওয়া। অবশ্য কৃ বু আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আইনগত বিষয় নিষ্পত্তি করতে পারে না, কিন্ত এটি সন্দেহভাজনদের তালিকাটিকে ছোট করতে সাহায্য করতে পারে। লিপসন বলেন, “অনেক লোক মনে করে কৃ বু নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারে না – এটি শুধুমাত্র অর্জিত জ্ঞানের পুনরাবৃত্তি করতে পারে”। এই গবেষণা প্রমাণ, কৃ বু এমন প্যাটার্ন চিহ্নিত করতে পারে যা প্রচলিত পদ্ধতিকেও উপেক্ষা করতে পারে। এটি উন্মুক্ত তথ্য এবং তার থেকে নতুন আবিস্কারের মূল্যকেও তুলে ধরে। ফলাফলগুলি, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কিছু প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করতে প্ররোচিত করবে, আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − eleven =