মানুষের উন্নত মস্তিষ্ক বার্ধক্যে দ্রুত ক্ষয় পায়

মানুষের উন্নত মস্তিষ্ক বার্ধক্যে দ্রুত ক্ষয় পায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
মানুষের উন্নত মস্তিষ্ক

বুদ্ধিমত্তা মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করেছে, তাকে বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। কিন্তু গবেষণা বলছে এই সুবিধার মূল্যও মানুষকে চোকাতে হয়। মানুষের মস্তিষ্ক অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বয়সকালে বেশি ক্ষয় পায়। ৬০ লাখ বছর আগে বিবর্তনের সময় মানুষ প্রাইমেট গ্রুপ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। হেইনরিখ হেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী স্যাম ভিকারি আর তার সহকর্মীরা দেখেছেন, বিবর্তনের যেমন পূর্বপুরুষের তুলনায় আমাদের অতিরিক্ত স্নায়বিক ক্ষমতা গড়ে উঠেছে, তেমন আমাদের মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থে বার্ধক্যজনিত প্রভাব বাড়িয়ে দিয়েছে। ভিকারি ও তার দল ১৮৯টা শিম্পাঞ্জি (প্যান ট্রোগ্লোডাইটস) এবং ৪৮০ জন মানুষের মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান করে অ্যালগরিদমের সাহায্যে ধূসর পদার্থের আয়তন তুলনা করেন। তারা শিম্পাঞ্জি, জলপাই বেবুন (প্যাপিও আনুবিস) এবং রিসাস ম্যাকাও (ম্যাকাকা মুলতা) এর মস্তিষ্কের মধ্যে পার্থক্যও পরীক্ষা করেছেন।
শিম্পাঞ্জি, বেবুনের মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধির সাথে বয়সজনিত ক্ষয় দেখা যায় না, বরং শিম্পাঞ্জি ও ম্যাকাওয়ের বয়সের সাথে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখা যায়। এর থেকে গবেষকরা বলছেন আমাদের কর্টিকাল প্রসারণের জন্য আমাদের মস্তিষ্ক বয়সকালে ক্ষয়ের সম্মুখীন হয়। গবেষকরা বলছেন, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স উচ্চ স্তরের জ্ঞানীয় ফাংশন যেমন কাজ নিয়ন্ত্রণ, স্মৃতি, ভাষার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তাদের মতে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের বৃহত্তর প্রসারণ, যা প্রাইমেটের জ্ঞানের বিবর্তনীয় বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, তা আবার বয়সকালে ধূসর পদার্থের হ্রাস করে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। উচ্চতর কর্টিকাল ফাংশনগুলোর সামঞ্জস্যের জন্য মানুষের মস্তিষ্ক প্রসারিত হয়। অন্যদিকে শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্কের অঞ্চল যা বেবুন এবং ম্যাকাওয়ের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বড়ো তা সংবেদনশীল তথ্য এবং নড়াচড়ার সাথে সম্পর্কিত। তাদের মতে এই কারণেই শিম্পাঞ্জিরা অন্যদের তুলনায় নানা হাতিয়ার ভালো ব্যবহার করতে পারে।
আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্নায়বিক পরিবর্তনের স্বতন্ত্র প্যাটার্ন তৈরি হয়, যা অ্যালজাইমার্স, পারকিনসনের মতো অবক্ষয়জনিত অসুখে বাড়ে। এই ধরনের বয়সজনিত পরিবর্তনে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স প্রথম প্রভাবিত হয়। আমাদের বিকাশের সাথে সাথে মস্তিষ্কের পরবর্তী যে অংশগুলো পূর্ণতা পায়, বার্ধক্যের সময় সেই অংশে প্রথম ক্ষয় দেখা যায়। মস্তিষ্কের এই অঞ্চলের নিউরন অন্যান্য অংশের তুলনায় কম ঘন বলে গবেষকরা মনে করছেন। তাদের ধারণা এই কম ঘনত্বের জন্য হয়তো এই এলাকার কোশ বেশি ভঙ্গুর হয়। শিম্পাঞ্জিদের বার্ধক্যের সময় মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থের কিছু ক্ষতি হয় কিন্তু তা মানুষের তুলনায় অনেক কম।এই গবেষণা সায়েন্স অ্যাডভান্স-এ প্রকাশিত হয়েছে।