মানুষের চামড়া ব্যবহার করত সিথিয়ানরা

মানুষের চামড়া ব্যবহার করত সিথিয়ানরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

প্রায় ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ইউরেশিয়ান অঞ্চলে সিথিয়ানরা শাসন করত। তারা তাদের যুদ্ধপ্রিয় এবং যাযাবর জীবনধারার জন্য পরিচিত ছিল। প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের মতে সিথিয়ানরা ভয়ঙ্কর হিংস্র এবং রক্তপিপাসু জাতি ছিল। সিথিয়ান যোদ্ধারা তাদের জয় করা শত্রুদের মৃতদেহর বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করত আর এই বর্ণনাই করেছেন হেরোডোটাস। তিনি বর্ণনা করেন কীভাবে সিথিয়ানরা শত্রুদের চামড়া ব্যবহারযোগ্য করে তুলত আর সেই চামড়া দিয়ে নিজেদের জন্য তীর রাখার তূণীর তৈরি করত যা তাদের শত্রুদের জন্য ছিল চূড়ান্ত অপমানজনক। হেরোডোটাসের কিছু বর্ণনা অনেকসময় কল্পনাপ্রসূত বলা হলেও এই বিষয়ে তিনি অন্তত কিছুটা সঠিক ছিলেন বলে মনে করা হয়। দক্ষিণ ইউক্রেন জুড়ে সিথিয়ান কবরস্থান থেকে প্রাপ্ত চামড়ার টুকরো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে তূণীর থেকে পাওয়া কিছু নমুনা প্রকৃতপক্ষে মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লুইস আরস্টেড ব্র্যান্ড ও কিছু প্রত্নতত্ত্ববিদের মতে এই গবেষণা প্রমাণ করে যে সিথিয়ানরা প্রাথমিকভাবে চামড়া উৎপাদনের জন্য ভেড়া, ছাগল, গবাদি পশু এবং ঘোড়ার মতো গৃহপালিত পশুদের ব্যবহার করত, আবার পশমের জন্য বন্য প্রাণী যেমন শেয়াল, কাঠবিড়ালি এবং বিড়াল প্রজাতির উপর তারা নির্ভর করত। এর মধ্যে আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হল দুটি মানুষের চামড়ার নমুনার উপস্থিতি, যা প্রথমবার প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের দাবির প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেয় যে সিথিয়ানরা তাদের মৃত শত্রুদের চামড়া ব্যবহার করে চামড়ার জিনিসপত্র তৈরি করত। তাদের ফেলে যাওয়া নিদর্শন যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কবরের টিলায় পাওয়া গেছে তার প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ড রয়েছে।
হেরোডোটাসের খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে বাস করতেন, ঠিক সেই সময়ে যখন সিথিয়ান সমাজ তার শীর্ষে ছিল। সিথিয়ানদের ইতিহাস এবং রীতিনীতি নথিভুক্ত করার জন্য হেরোডোটাস একটি সম্পূর্ণ বই উৎসর্গ করেছিলেন। একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ে, তিনি বর্ণনা করেছেন রাজাদের কাছে তাদের কাজ প্রমাণ করতে সিথিয়ান যোদ্ধারা তাদের শত্রুদের শিরশ্ছেদ করত। সিথিয়ান যোদ্ধা শ্ত্রুর মাথার খুলির চামড়াকে হাতের তোয়ালে হিসাবে ব্যবহার করত যা তারা তাদের ঘোড়ার লাগাম থেকে ঝুলিয়ে রাখত। একজন যোদ্ধার যত বেশি তোয়ালে থাকে, তাকে তত বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়। হেরোডোটাস এও লিখেছেন যে সিথিয়ানরা সেই চামড়া দিয়ে পরার জন্য পোশাক তৈরি করত, অনেকে মৃতের শরীর থেকে চামড়া ছিঁড়ে কাঠের ফ্রেমে বিছিয়ে ঘোড়ার পিঠে করে নিয়ে যেত।
গবেষক দলটি ১৪টি কবরস্থান থেকে খনন করা চামড়ার ৪৫টি টুকরোর উপর তাদের গবেষণা পরিচালনা করে। পূর্বে বিজ্ঞানীরা চামড়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করতেন কারণ চামড়া ট্যান করার প্রক্রিয়ায় ডিএনএ নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা চামড়ার প্রোটিন বিশ্লেষণ করার কৌশল তৈরি করেছেন এবং সেই তথ্য ব্যবহার করে অবদানকারী প্রজাতি শনাক্ত করেছেন। গবেষকরা দেখেন অনেক ক্ষেত্রে পায়ের জুতো বা পোশাক তৈরি করতে পশুর চামড়া ব্যবহার হয়েছে। দুটি ক্ষেত্রে তীর রাখার পাত্রে মানুষের চামড়া পাওয়া গেছে। তূণীরের বেশিরভাগ অংশই প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু ঢাকাটি মানুষের চামড়ার ছিল। গবেষকরা মনে করেছেন বিভিন্ন চামড়া দিয়ে তীর রাখার পাত্র তৈরি হলেও সম্ভবত বিরল চামড়াগুলো তারা ঢাকা হিসেবে ব্যবহার করত। গবেষণাটি PLOS One জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − fourteen =