
পেনসিলভেনিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একটি নতুন গবেষণা অনুসারে, মানুষের জীবনধারা তার মুখের মধ্যে উপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীবের গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে। তাদের মতে মুখের ভিতরে মাইক্রোবায়োম বা অণুজীবের জগত বিভিন্ন ব্যক্তির বেঁচে থাকার কৌশল অনুসারে আলাদা – যাযাবর শিকারী থেকে কৃষক বা শিল্পোন্নত গোষ্ঠী, সবার ক্ষেত্রেই তা আলাদা। তারা দেখেছেন যে জীবনধারা, সেইসাথে নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাস মুখের মাইক্রোবায়োমকে আকার দিতে পারে৷ মুখের মধ্যে থাকা অণুজীবের সম্প্রদায় স্বাস্থ্যকর হলে তা খাদ্য হজমে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আক্রমণকারী রোগজীবাণু থেকে শরীরকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে একটি অস্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োম মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ডেকে আনতে পারে। গবেষণায় ৬৩ জন নেপালি ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গবেষকরা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষজন যাদের জীবিকা ভিন্ন তাদের মুখের মাইক্রোবায়োম অধ্যয়ন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে শিকারী, খাবার সংগ্রহকারী যারা সারা বছর জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়ায়; কৃষক, যারা গত ৫০ বছর ধরে চাষবাস করেছে কিন্তু আগে তারা শিকার করে খেত; তাছাড়াও দলটিতে রয়েছে কৃষিজীবি মানুষ যারা বহু বছর ধরেই কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল; কিছু শিল্পপতি, যারা প্রবাসী নেপালি কিন্তু বিগত ২০ বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেছে এবং সেইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একই এলাকায় বসবাসকারী শিল্পপতিদের একটি দল যারা সেখানেই জন্মগ্রহণ করেছে। তাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং অন্যান্য আচরণ সহ জীবনধারা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন গবেষকরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। গবেষকরা প্রতিটি ব্যক্তির মুখের মাইক্রোবায়োমের অণুজীবের ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করেন যাতে ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট প্রজাতি নির্ধারণ করা যায়। তারা দেখেন বিভিন্ন গোষ্ঠীর মুখে নির্দিষ্ট ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এর থেকে তারা সিদ্ধান্তে আসেন যে মানুষের জীবনধারা প্রকৃতপক্ষে তার মুখের অণুজীবের জগতকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও প্রভাব ফেলে মানুষের অভ্যাস যেমন ধূমপান, খাবারে নির্দিষ্ট ধরনের শস্য যেমন বার্লি বা ভুট্টা বনাম চাল বা গম — এবং নেটল নামক একটি উদ্ভিদের ব্যবহার। গবেষকরা জানিয়েছেন মানুষ যখন তার তার জীবনধারায় পরিবর্তন আনে — তা ভিন্ন খাদ্য বা ভিন্ন অবস্থান বা ভিন্ন সংস্কৃতিতে হোক না কেন – তা মাইক্রোবায়োমেও পরিবর্তন আনে এবং এই পরিবর্তনগুলো কতটা এবং কত দ্রুত ঘটে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। মুখের ভিতরে অণুজীবের জগত আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে তা কীভাবে পরিবর্তিত হয় এবং মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।