মানুষের জৈবিক ঘড়ি পরিবর্তন ও তার ফল

মানুষের জৈবিক ঘড়ি পরিবর্তন ও তার ফল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

শরীরের দৈনিক আভ্যন্তরীণ সার্কেডিয়ান ঘড়ির নেটওয়ার্ক রয়েছে যা ঘুম, বিপাক এরকম স্বাস্থ্যের বেশিরভাগ ক্ষেত্র প্রভাবিত করে। প্রতিদিনের ঘুমের ছন্দের সাথে মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় ঘড়ি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তবে অন্যান্য কলাতেও যেমন লিভার, পেশি, চর্বিতে এই ঘড়ি রয়েছে। আমাদের শরীরের আভ্যন্তরীণ ঘড়ির ছন্দ আর প্রতিদিন বাইরের পরিবেশে পরিবর্তনের মধ্যে যে সম্পর্ক তাকে সার্কাডিয়ান ডিসিঙ্ক্রোনি বলা হয়। আমাদের জীবনে, সার্কাডিয়ান ডিসিঙ্ক্রোনি রাতের শিফটে কাজ, জেট ল্যাগ এরকম সময়ে ঘটে। এখানে অভ্যন্তরীণ সার্কাডিয়ান ছন্দ ও পরিবেশের ছন্দের মধ্যে অমিল থাকে যেমন আলো-অন্ধকার চক্র। আগে পরীক্ষাগারে গবেষণায় ১২ ঘণ্টার পার্থক্যে আমাদের আভ্যন্তরীণ ঘড়ির ছন্দ ও পরিবেশগত পরিবর্তন দু এক দিনের জন্য উল্টে দিয়ে মানব সার্কাডিয়ান ডিসিঙ্ক্রোনির পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে অংশগ্রহণকারীদের বিপাকে পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ দুর্বল ছিল। কিন্তু সার্কাডিয়ান ডিসিঙ্ক্রোনি অল্প সময়ের জন্য হলে,আমাদের শরীরে তার কী প্রভাব পড়ে তা স্পষ্ট নয়।
পরিবেশের ৫ ঘণ্টা সময় পরিবর্তনে মানুষের শরীরে কী পরিবর্তন তা ইউনিভার্সিটি অফ সারে-র গবেষণায় দেখা হয়েছিল। পরীক্ষায় ওজন বেশি, ৪৫ বছর বয়স, কিন্তু কোনো রোগ নেই এরকম অংশগ্রহণকারীদের নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন ৫ ঘণ্টা পিছিয়ে তাদের শরীরের বিভিন্ন মার্কার মাপা হয়েছে। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য বিতরণ গবেষকদের হাতে ছিল। পরীক্ষায় তাদের বিপাক দেখার জন্য রক্তের মার্কার, মস্তিষ্কের ঘড়ির জৈবমার্কার (মেলাটোনিন) যেমন দেখা হয়েছিল, তেমন তন্দ্রা ভাব, দিনে জাগার ক্ষেত্রে তৎপরতা নির্ণয় করা হয়েছিল। ৫ ঘণ্টা সময় পিছিয়ে দেখা গিয়েছিল, তাদের সান্ধ্য তন্দ্রা আসছে, সন্ধ্যায় তৎপরতা কমছে। এর কারণ মেলাটোনিন ঘনত্বের ছন্দ পরিবর্তন হয়, যাতে মস্তিষ্কের ঘড়ির পরিবর্তন হয়। পরবর্তী ৫ দিনে এর কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও বেসলাইন পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। বিপাকের ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। খাবার থেকে শক্তি খরচ কম, প্রাতরাশ খাওয়ার পর পাকস্থলী থেকে কম নিঃসরণ, রক্তে শর্করার মাত্রা ও ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে পার্থক্য দেখা গিয়েছিল। বিপাকগত পরিবর্তন তিনদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু মস্তিষ্কের ঘড়ির ছন্দ ও তন্দ্রাভাব ঠিক হতে বেশি সময় লেগেছিল।
গবেষণা বলছে, যারা রাতের শিফটে কাজ করেন বা জেট ল্যাগের জন্য সার্কাডিয়ান ডিসিঙ্ক্রোনির শিকার এমন ব্যক্তিদের ঘুম ও তৎপরতার ছন্দ পুনরায় সেট করার জন্য কিছু পরামর্শ নেওয়া দরকার। যেমন, দিনের নির্দিষ্ট সময়ে আলোর সংস্পর্শে আসা বা তা এড়িয়ে চলা, উপযুক্ত সময়ে মেলাটোনিন সম্পূরক গ্রহণ করাও সাহায্য করতে পারে। আর বিপাক হার ঠিক রাখার জন্য উচ্চগুণমানযুক্ত খাবার খাওয়া আর বেশি রাতে না খাওয়া মেনে চলা ভালো।