মানুষের বিবর্তন ঘটিয়েছে সূর্যের আলো

মানুষের বিবর্তন ঘটিয়েছে সূর্যের আলো

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

 

আমাদের বিবর্তনীয় ইতিহাস বলছে, মানুষের কার্যকলাপ সূর্যের আলোর সাথে যুক্ত। আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম আলো আমাদের আবহমান ঘুম-জাগরণ চক্র থেকে মুক্ত করেছে, তবে সূর্যের আলো আমাদের শরীরে তার যে চিহ্ন রেখে চলেছে সে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্সের প্রথম উৎপত্তি আফ্রিকায়, এখানকার জলবায়ুর এই বিকাশে অবদান রয়েছে। প্রখর সূর্যের আলো থেকে বাঁচতে, মানুষ দু পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল, যাতে তার শরীর সূর্যের আলোয় কম উন্মুক্ত হয়। আর ঘন কোঁকড়া চুল সূর্যের উষ্ণতা থেকে তার মাথাকে আবরণ দিয়েছিল। সোজা চুলের তুলনায় কোঁকড়া চুল মাথার খুলির তাপনিরোধকের কাজ করত। সূর্যের আলো ভিটামিন B9- ফোলেট-কে ভেঙে দেয়, যাতে বার্ধক্য দ্রুত হয়, ডিএনএ-রও ক্ষতি হয়। প্রাচীনকালে সূর্যের আলোতে হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষের গায়ের রঙও হত ঘন কালো। এই কালো গাত্র বর্ণ ইউভি আলো শোষণ করে ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করত।
যখন মানুষ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল, সেখানের দুর্বল আলোয় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন জিনের মাধ্যমে হালকা রঙের ত্বকের বিকাশ ঘটে। এটা, সম্ভবত গত ৪০০০০ বছরে দ্রুত হারে ঘটতে থাকে। পৃথিবীর মেরুর কাছাকাছি অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ কমে যাওয়ায়, আমাদের ফোলেট ভেঙে সূর্যালোককে রক্ষা করার জন্য কম রঞ্জকের প্রয়োজনীয়তা ছিল, তাই এখানকার মানুষের গায়ের রঙ হয় হালকা। তার সাথে হালকা গাত্র বর্ণ দুষ্প্রাপ্য আলো আরও বেশি শোষণ করে যাতে শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। সূর্যের আলো তারতম্য এনেছে আমাদের চোখের তারায়। উচ্চ স্থানের মানুষের চোখের তারায় রঞ্জক কম থাকে। তাদের অক্ষিগোলকও বড়ো হয়। এর পেছনে সম্ভাব্য কারণ হল, আলো সেখানে দুর্লভ, আর মানুষ যেন তা সহজে গ্রহণ করতে পারে।
আলোর জন্য আমাদের মস্তিষ্ক ও হরমোন দিনে জেগে থাকা আর রাতের ঘুমের চক্র তৈরি করেছিল। দিনে সূর্যের আলোয় মানুষ চারপাশে সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখতে পেত, নানা রঙ বুঝতে তার সুবিধা হত। স্বল্প আলোয় আমাদের দেখতে অসুবিধা হত, আমাদের শোনা, গন্ধ পাওয়া সমস্ত ইন্দ্রিয় কিছুটা ভোঁতা হয়ে যেত। আমাদের কাছাকাছি অন্যান্য প্রাইমেট যেমন গরিলা, শিম্পাঞ্জিরাও দিনের বেলা সক্রিয় থাকে আর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। মানুষ যত সভ্য হতে থাকল সে আগুন, তেলের প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালিয়ে আলো তৈরি করতে থাকল। এরপর বৈদ্যুতিক আলো আসার পর তার কাছে দিন আর রাতের পার্থক্য রইল না। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন চক্র ব্যহত হলে আমাদের বৌদ্ধিক ও শারীরিক কার্যকলাপে তার খারাপ ফল পড়ে। কৃত্রিম আলো আমাদের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ ভেঙে দিচ্ছে, যার জন্য আমাদের চোখ সকলের আগে খারাপ হতে শুরু করে। আগামীতে কৃত্রিম আলো মানুষের জীবনে আরও প্রভাব ফেলবে কিন্তু আমাদের শরীরে তার খারাপ প্রভাব কি পড়তে পারে তা বলা মুস্কিল।