মানুষের মানসিক বোঝা, কুকুরেও বোঝে !

মানুষের মানসিক বোঝা, কুকুরেও বোঝে !

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ জুলাই, ২০২৪
কুকুরেও-বোঝে

গতবছর গোটা ছয়েক কুকুর ছানা ফ্ল্যাটের নীচে জন্মালো। কালের নিয়মে, প্রকৃতির নিয়মে তার থেকে তিনটে বেঁচে রইল। বড় হতে থাকলো… খাবার দিতে গেলে প্রথমে ‘লেজটি নেড়ে’ একেবারে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গড়াগড়ি দিতো। কিন্তু দিন বিশেষে খেয়ালে পরত তাদের ‘খামখেয়ালিপনা’। তাদের এই লেজ নেড়ে আনন্দ জাহির থাকতো কম। কিছুটা দূরে দূরে সরে যেতো। চোখে পড়ত হতাশার কিছু ইঙ্গিত। এই অভিজ্ঞতা কুকুরপ্রেমি অনেক মানুষেরই। তবে এই প্রতিবেদনটি কুকুরের ‘খামখেয়ালিপনা’কে বিজ্ঞানসম্মত একটা যুক্তি দেয়।

আসলে মানুষের মনের চাপ, কুকুর গন্ধ শুঁকেই বুঝতে পারে। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি যে তীক্ষ্ণ, তা নতুন করে জানার মতন বিষয় নয়। কিন্তু সম্প্রতির এক গবেষণা জানাচ্ছে, আপনার মনের অবস্থার ভিত্তিতে গায়ের গন্ধের রকমভেদ করতে পারে ওরা। কাছের মানুষের হতাশাও, কুকুরের মধ্যে এমন মানসিক প্রভাব সৃষ্টি করে যা তাদেরকেও ‘হতাশাবাদী’ করে তোলে। হিউম্যান – ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের, অ্যানিম্যাল ইন্টার‍্যাকশন রিসার্চার নিকোলা রুনি বলেছেন, কুকুরের মালিকরা জানেন যে তাদের পোষ্য কতটা আবেগ বুঝতে পারে। তবে অপরিচিত মানুষও যিনি চাপের মধ্যে আছেন, তার থেকেও কুকুরের মানসিক অবস্থা, পুরস্কারের উপলব্ধি, শেখার ক্ষমতা প্রভাবিত হয়।

পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে কুকুর অন্যান্য মানুষের আবেগ, তাদের ঘামের মধ্যের কেমোসিগন্যালকে চিনতে পারে। চেনা মানুষ বিশেষত মণিবের মৌখিক বা শারীরিক সংকেতগুলো কুকুর সহজেই পড়তে পারে। তাই তারা কুকুরগুলিকে, পরিচিত মানুষের কাছে সরাসরি নিয়ে যাননি। পরিবর্তে, তিনজন অপরিচিত মানুষের দুই অবস্থার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। (১) কোনো চাপের মধ্যে কাজ করছেন (অঙ্ক কষা বা জনসাধারণের সাথে কথা বলার সময়), (২) আরাম করছেন (প্রকৃতির একটা ভিডিও দেখতে দিয়ে)। কুকুরদের তার আগে খাবার ভরা ও খাবারহীন বাটি দেখানো হয়। এরপর চাপযুক্ত ব্যক্তির ঘর্মাক্ত কাপড় এবং আরামে থাকা ব্যক্তির ঘর্মাক্ত কাপড় তাদের শোঁকানো হয়। দেখা যায়, চাপযুক্ত ব্যক্তির কাপড় শোঁকার পর কুকুররা খাবার ভরা বাটি খুঁজতে গিয়ে ভুল করছে। অন্যদিকে আরামে থাকা ব্যক্তির ঘর্মাক্ত কাপড় শোঁকানোর পর তাদের মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়নি। মানুষের মানসিক চাপের গন্ধের সংস্পর্শে আসা কুকুরের প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক মানসিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। তবে এখনও ভালোভাবে বোঝা যায়নি, মানুষের মানসিক অবস্থার রকমভেদে, কুকুরের অনুভূতি এবং শেখার পদ্ধতি কীভাবে প্রভাবিত হয়। তা স্পষ্ট করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।

এই গবেষণা, সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত হয়েছে। আর এটা জানলেও অবাক হবেন, অবচেতনভাবে শোঁকা এই লুকোনো সংকেতগুলো আমাদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ কাজ করে। আশেপাশের মানুষগুলির চাপ ঠিক এইভাবেই আমাদের আবেগ এবং সিদ্ধান্তগুলো সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + five =