মানুষের মুখে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া

মানুষের মুখে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে একটা বাস্তুতন্ত্রের অস্তিত্ব আমাদের মুখের ভেতরে। মুখের ভেতরের বায়োফিল্মে ৫০০ ধরনের স্বতন্ত্র সম্প্রদায়ের ব্যাকটেরিয়ার একটা সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্র দেখা যায়। সুস্থ মানবদেহে বসবাসকারী অণুজীব সম্প্রদায়ের মধ্যে ডেন্টাল প্লেক এক ধরনের অণুজীবের বিশাল জনসংখ্যা। এদের মধ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া কর্নিব্যাকটেরিয়াম ম্যাট্রুচোটি, ডেন্টাল প্লেক ছাড়া অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায়না। এটা মানুষের শরীরে সহাবস্থান করে, “মানব মাইক্রোবায়োম” গঠন করে। মেরিন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি (MBL) এবং এডিএ ফরসিথ- এর গবেষণায় জানা যাচ্ছে ডেন্টাল প্লেকে বসবাসকারী কর্নিব্যাকটেরিয়াম ম্যাট্রুচোটি – র কোশ বিভাজনের ধরন আলাদা। সাধারণত একটা ব্যাকটেরিয়া বিভক্ত হয়ে দুটো ব্যাকটেরিয়াতে পরিণত হয়। যেটা সমগ্র জীবজগতের সাধারণ প্রক্রিয়া। কর্নিব্যাকটেরিয়াম ম্যাট্রুচোটি এভাবে বিভাজিত হয়না। এর ফিলামেন্ট একসাথে একাধিক কোশে বিভক্ত হয়। এই বিরল প্রক্রিয়া মাল্টিপল ফিশন নামে পরিচিত। এই গবেষণা প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।

কর্নিব্যাকটেরিয়াম ম্যাট্রুচোটি- এর কোশ প্রধান ফিলামেন্টের আকারের ওপর নির্ভর করে ১৪ টা খণ্ডেও বিভক্ত হতে পারে। এই কোশগুলো প্রধান ফিলামেন্টের একটা মেরু বরাবর বাড়তে পারে, যা টিপ এক্সটেনশন নামে পরিচিত। ডেন্টাল প্লেকে অবস্থিত কর্নিব্যাকটেরিয়াম যেন বনের একটা ঘন বড়ো গাছের মতো। এগুলো একটা স্থানিক কাঠামো তৈরি করে অন্যান্য প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার জন্য বাসস্থান সরবরাহ করে। বায়োফিল্মে ঘন নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য এই ব্যাকটেরিয়ার কোশ বিভাজনের ধরন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের ফিলামেন্ট এই বায়োফিল্মে শজারুর মতো গঠন তৈরি করে। দিনে দুবার ব্রাশ করলেও এই বায়োফিল্ম সম্পূর্ণ সরানো যায়না। ঘণ্টায় মাইক্রোমিটার পরিমাণে বেড়ে, এই ব্যাকটেরিয়ার কলোনি দিনে আধ মিলিমিটার বাড়তে পারে। নাসিকা গহ্বর ও ত্বকে এই ব্যাকটেরিয়া দেখা যায়। তবে তাদের আকৃতি আলাদা। এই ব্যাকটেরিয়ার ফ্ল্যাজেলা থাকেনা। তাই এরা নিজের মতো নড়াচড়া করতে পারেনা। গবেষকদের মতে এদের লম্বা সুতোর মতো ফিলামেন্টে এদের পরিবেশ অন্বেষণ করতে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + six =