
রবীন্দ্রনাথনাথ ঠাকুরের মজার কবিতা জুতা আবিষ্কারে, হবু রাজার জুতো অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষে এক চর্মকার আবিষ্কার করেন। বাস্তবে মানুষ কবে থেকে জুতো পরা শুরু করল, কীরকম ধরনের জুতোই বা তারা প্রথমে পরত? বিজ্ঞানীরা বহু প্রাচীন জুতোর নিদর্শন পেয়েছেন, আরমেনিয়াতে পাওয়া গেছে ৫৫০০ বছরের পুরোনো চামড়ার জুতো, ৬২০০ বছরের পুরোনো ঘাসের জুতো পাওয়া গেছে স্পেনে, আবার মিসৌরিতে ৮৩০০ বছরের পুরোনো জুতোর খোঁজ মিলেছে। ওরেগন ইউনিভার্সিটি অফ ন্যাচারাল অ্যান্ড কালচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালক টমাস কনোলির মতে, গবেষকদের ডেটিং করে দেখা সবচেয়ে প্রাচীনতম জুতো মধ্য ওরেগনের ফোর্ট রক গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটা ১০৪০০ বছরের পুরনো এক জোড়া চটি। ১৯৩৮ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ফোর্ট রক গুহায় খনন শুরু করে সেজব্রাশের ছাল এবং অন্যান্য তন্তু থেকে বোনা কয়েক ডজন চটি আবিষ্কার করেছিলেন। একই রকমের চটি সিয়েরা নেভেডা ও রকি পর্বতের মধ্যে উত্তর এবং পশ্চিম গ্রেট বেসিনের প্রায় এক ডজন স্থানে পাওয়া গেছে। এগুলোর ফ্ল্যাট সোলের ওপর পায়ের আচ্ছাদন রয়েছে। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে গবেষকদের বক্তব্য এই ধরনের বোনা চটি শীতকালে ব্যবহার করা হত। ঠান্ডা জলাভূমি, হ্রদের আশেপাশে মাছ ধরা, জাল কাটা, মাদুর এবং ঝুড়ির জন্য বুলরাশ সংগ্রহের মতো কাজের সময় এই চটি ব্যবহার হত। এই চটিগুলো ছিদ্রযুক্ত হলেও তাদের তন্তু তাপ ধরে রেখে পা উষ্ণ রাখত।
তবে মানুষ এর অনেক আগে থেকে জুতো পরত বলে গবেষকদের অনুমান। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় বলা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার এক সমুদ্রতটে দেড় লক্ষ বছরের পুরোনো ফসিলে জুতোর পরার নিদর্শন পাওয়া গেছে। নেলসন ম্যান্ডেলা ইউনিভার্সিটির গবেষক চার্লস হেলম জানিয়েছেন, এই ফসিলের পায়ের ছাপে কোনো আঙুলের ছাপ নেই, অর্থাৎ জুতোয় পা ঢাকা ছিল। হেলম বলেছেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এখনকার মতো, আঘাত ও তাপমাত্রার হাত থেকে বাঁচতে সম্ভবত জুতো বানিয়ে তা পরা শুরু করেছিলেন। তবে তারা কোন জুতোর সরাসরি জীবাশ্মের চিহ্ন খুঁজে পাননি। তার মতে সম্ভবত যে জৈব পদার্থ দিয়ে প্রাচীন জুতো তৈরি হয়েছিল তা অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই গবেষকদের দেড় লক্ষ বছরের পুরোনো জুতো সম্বন্ধে জানতে অন্যান্য প্রমাণ সন্ধান করতে হবে বলে তিনি জানান।