মানুষ কেন নানা রং দেখতে পায়

মানুষ কেন নানা রং দেখতে পায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ জানুয়ারী, ২০২৪

আলোর সম্পূর্ণ বর্ণালী দেখতে, চোখের রেটিনাকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট রঞ্জক তৈরি করতে হবে। ভিটামিন এ-এর অভাব এই রঞ্জকগুলির উত্পাদন বন্ধ করে দেয়, ফলে রাতকানা রোগ হতে পারে। গবেষকরা পেট্রি ডিশে মানুষের রেটিনার অঙ্গাণু তৈরি করে, কীভাবে ভিটামিন A- এমন কোশ তৈরি করে যা মানুষকে লক্ষ লক্ষ রং দেখতে সক্ষম করে, তা আবিষ্কার করেছেন। রং দেখার এই ক্ষমতা কুকুর, বিড়াল বা অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নেই। PLOS Biology-তে প্রকাশিত এই গবেষণায় মানুষের বর্ণান্ধতা, বয়সের সাথে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট, ফটোরিসেপ্টর কোশ সংক্রান্ত নানা অসুখ নিয়ে জানা গেছে। ফটোরিসেপ্টর কোশের দুটো ধরন, একটা রড কোশ অপরটা কোণ কোশ। রড কোশগুলো আলোর প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এরা রাতে দেখার কাজ করে, আর কোণ কোশগুলো আলোর ফোটনের বিস্তৃত বর্ণালী শনাক্ত করতে পারে এবং রং চেনার জন্য দায়ী।
গবেষকরা দেখিয়েছেন যে কীভাবে জিন মানুষের রেটিনাকে নির্দিষ্ট রং-সংবেদনশীল কোশ তৈরি করতে নির্দেশ দেয়। বিজ্ঞানীরা মনে করতেন এই প্রক্রিয়া থাইরয়েড হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। চোখের অর্গানয়েডের কোশীয় বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তন করে, গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন রেটিনোইক অ্যাসিড নামে অণু নির্ধারণ করে যে একটা কোণ কোশ লাল বা সবুজ আলো চিনতে সক্ষম হবে কিনা। শুধুমাত্র স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষ এবং মানুষের খুব ঘনিষ্ঠ প্রজাতির প্রাইমেটে কোণ কোশের লাল সেন্সর বিকশিত হয়। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন লাল কোণ কোশের গঠন এলোমেলোভাবে হয়, যেখানে কোনো কোশ সবুজ বা কোনো কোশ লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্য চিনতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি জনস্টনের দলের গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে যে এই কোণ কোশ গঠনের প্রক্রিয়া থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। কিন্তু বর্তমান গবেষণা বলছে, বেশি পরিমাণে অঙ্গাণু তৈরির সময় রেটিনোয়িক অ্যাসিডের অধিক মাত্রা থাকলে সবুজ কোণ কোশ তৈরি হয়। রেটিনোয়িক অ্যাসিডের মাত্রা জিনগত নির্দেশ পরিবর্তন করে এবং বিকাশের পরবর্তী স্তরে লাল কোণ কোশ গঠন করে।
অপসিন নামে প্রোটিনের জন্য সবুজ ও লাল কোণ কোশে পার্থক্য হয়, এটা আলো চিনে মানুষের মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় যে সে কি রং দেখছে। সবুজ ও লাল কোণ কোশের সেন্সর জিন ৯৬% এক হওয়া সত্ত্বেও অপসিন স্থির করে দেয়, কোণ কোশ লাল বা সবুজ কোন রং চিনতে সক্ষম হবে। সবুজ ও লাল কোণ কোশের অনুপাতের বিভিন্ন পার্থক্য হয়, কিন্তু তাতেও মানুষের দৃষ্টি শক্তিতে প্রভাব পড়ে না। গবেষকরা ম্যাকুলার ডিজেনেরশন রোগ, যা রেটিনার কেন্দ্রে আলোক সংবেদনশীল কোশ নষ্ট করে দৃষ্টিশক্তির অন্তরায় হয় তার সম্পর্কে বুঝতে এ নিয়ে আরও গবেষণা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine + twelve =