মানুষ পৃথিবীর দখল নিয়েছে, তার পেছনে একটা কারণ হল বংশ পরম্পরায় চলতে থাকা মানব সংস্কৃতি। আমরা নিজেদের সংস্কৃতি পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিই, এভাবে সংস্কৃতি সঞ্চিত হতে থাকে। প্রাণীর আচরণ সম্পর্কিত নানা আবিষ্কার তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরে। মানুষ যেমন তার বাচ্চাদের কাছে জ্ঞান পৌঁছে দেয়, তেমনই নতুন রানী লিফকাটার পিঁপড়ে বের হয়ে তার মায়ের থেকে সামান্য ছত্রাক সংগ্রহ করে নতুন উপনিবেশ শুরু করে। এটা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে হয়ে আসার ফলে এই উপনিবেশগুলোর মধ্যে থাকা ছত্রাক উপনিবেশের বাইরের বন্য ছত্রাক থেকে জিনগতভাবে আলাদা। মানুষের ভাষা যেমন পরিবর্তিত হয় সেরকম হাম্পব্যাক তিমির গান বিবর্তিত হয়ে, গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, আর সময়ের সাথে সাথে সেই গান জটিল হয়ে ওঠে। মানুষের মতো, শিম্পাঞ্জিরাও হাতিয়ার ব্যবহার করে, গবেষকদের কাছে প্রমাণ আছে যে শিম্পাঞ্জি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে হাতিয়ার ব্যবহার করে চলেছে। এমনকি পঙ্গপাল স্থানীয় পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এপিজেনেটিক পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে ডিএনএ ক্রম পরিবর্তন না করেই জিনের ক্রিয়াকলাপকে পরিবর্তন করতে পারে। এই আবিষ্কারগুলো দেখায় প্রাণীদের যেমন নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, তেমন তাদের সংস্কৃতিতে সঞ্চয়ের উদাহরণও রয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সংস্কৃতি বয়ে বেড়ানো মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য নয়। মানুষের সংস্কৃতিতে কী এমন রয়েছে যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
দ্য স্কুল অফ হিউমান ইভোলিউশান অ্যান্ড সোশ্যাল চেঞ্জের অধ্যাপক বিবর্তনীয় নৃবিজ্ঞানী টমাস মরগান ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নতুন হাইপোথিসিস অনুযায়ী আমাদের আধিপত্য বিস্তারের কারণ আমাদের উন্মুক্ত প্রকৃতি। আমাদের যোগাযোগ করার বা বোঝার ক্ষমতা অসীম। প্রাণীরা যা করছে সে সম্পর্কে যেভাবে চিন্তা করে তা তাদের সংস্কৃতির বিকাশের পথকে বাধা দেয়, তারা একই সংস্কৃতি অনুসরণ করতে থাকে। এর একটা কারণ হল তারা বিস্তৃত ক্রম খুব সহজে কল্পনা করতে পারে না। আমরা, মানুষেরা জটিল নির্দেশাবলীর ক্রম তৈরি করতে এবং ধরে রাখতে সক্ষম, এটা আমাদের অসীম সংখ্যক আচরণ করতে দেয়, এটাই মানুষের উন্মুক্ততা। মানুষও তার সংস্কৃতি বংশ পরম্পরায় ধরে রাখে, কিন্তু তাকে নিজের মতো পরিবর্তন করে, যা অন্য প্রাণীরা পারেনা।