মানুষ সাধারণত ডানহাতি কিন্তু দেখে বাম চোখে

মানুষ সাধারণত ডানহাতি কিন্তু দেখে বাম চোখে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুলাই, ২০২৪

বিভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে প্রায় ৯০% মানুষ ডানহাতে কাজ করতে বেশি স্বচ্ছন্দ। আবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দেখার সময় ডানদিকের তুলনায় বাম দিকের ওপর জোর দেন। শৈশবেই আমাদের মস্তিষ্কে এই ধরনের পক্ষপাতিত্বের বিকাশ ঘটে। মস্তিষ্কের বাম ও ডান গোলার্ধ শরীরের বিপরীত দিকের মোটর ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। যদি আমাদের বামদিকের চাক্ষুষ ক্ষেত্র বেশি প্রভাবশালী হয়, তার অর্থ মস্তিষ্কের ডান দিক, মুখ ও আবেগ চেনার ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে।
সাম্প্রতিককালেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল এই আচরণগত পক্ষপাত মানুষের অনন্য। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে প্রাণীদের ওপর গবেষণা দেখায় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যেও আচরণগত পক্ষপাত রয়েছে। যেমন যে মুরগির ছানা পক্ষপাতযুক্ত চোখ নিয়ে খাবার খোঁজে, তারা নুড়ি থেকে সহজেই শস্যকণা খুঁজে নেয়। চোখের পক্ষপাতিত্ব থাকলে তাদের শিকারীদের হাত থেকে তুলনামূলকভাবে বাঁচার সু্যোগও বেশি থাকে। পরীক্ষাগারে অধ্যয়নে দেখা যায় পক্ষপাতযুক্ত প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য যে কাজ দেওয়া হয়েছিল তারা তা বেশি ভালো সম্পন্ন করতে পারে, সম্ভবত বনে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রেও তারা এর সুবিধা ভোগ করে। সবথেকে ভালো সুবিধা হল যখন পাখির ছানাগুলো খাদ্য খোঁজার সময় এক চোখ মাটির দিকে রাখে আর অন্য চোখ আকাশের দিকে রাখে, যাতে তারা খাওয়ার সময় শিকারীদের দিকে খেয়াল রাখতে পারে। এই ধরনের “বিভক্ত মস্তিষ্কের” সুবিধা হল বন্য প্রাণীরা খাদ্যের জন্য চারণও করতে পারে আবার শিকারীদের সন্ধানও রাখতে পারে।
তবে এটা বোঝা যায় না কেন এত লোক কাজ করার জন্য ডানহাত আর মুখ প্রক্রিয়াকরণের জন্য বাম দিকের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। সাধারণত প্রতিটা ব্যক্তির বাম বা ডান পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার ৫০-৫০ সম্ভাবনা থাকা উচিত। তবুও প্রাণীজগত জুড়ে, যেকোনো প্রজাতির বেশিরভাগ প্রাণী একই দিক ব্যবহার করে থাকে। অধ্যয়ন জানাচ্ছে এতে হয়তো সামাজিক সুবিধা থাকতে পারে। যেমন যেসমস্ত প্রাণীরা ওড়ার সময় বা সাঁতার কাটার সময় একসাথে দলের সাথে থাকে তাদের শিকারীদের হাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু যারা এই দল থেকে ছিটকে পড়ে তারা সহজেই শিকারীর কবলে পড়ে।
ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্স, অক্সফোর্ড, ওয়েস্টমিনস্টার, লন্ডনের গবেষকরা ১৬০০ মানুষের ওপর গবেষণায় দেখেছেন মানুষের ডানহাতি বা বামহাতি প্রবণতা যদি বিশেষ শক্তিশালী হয় তাহলে তাদের কর্মক্ষমতার নমনীয়তা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। যাদের বিপরীত প্রোফাইল, দেখা গেছে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য গোষ্ঠীর তুলনায় তাদের কম সামাজিক স্কোর ছিল।আবার এই গোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদের অটিজম বা মনোযোগ ঘাটতি হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার-এর কথা জানিয়েছেন। তবে বিপরীত প্রোফাইল এবং অটিজম এবং ADHD এর মধ্যে একটা কার্যকারণ সম্পর্ক আছে কিনা এখনও জানা যায়নি, তা নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =