মারণ জলের সমাধা – অ্যাক্টিভেটেড কার্বন

মারণ জলের সমাধা – অ্যাক্টিভেটেড কার্বন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ জুলাই, ২০২৪

বর্ষায়, পানীয় জল ঘিরে এমনি দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সময়ে অসময়ে পেটের গোলযোগে আঙুল ওঠে পানীয় জলের দিকে। এদিকে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। পানীয় জলে মিশছে কীটনাশক। তাড়াতাড়ি আর বেশি বেশি ফলন চাই। ধান কিংবা গম সব কিছুর জন্যই, ব্যাপক হারে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে গেছে। বিগত ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী কীটনাশক ব্যবহার বেড়েছে ৬২%। অল্প রাসায়নিকে কীভাবে উচ্চ ফলনশীল চাষ করা যায়, তার হদিশ কিছু জায়গায় থাকলেও, প্রয়োগে আমরা ব্যার্থ।
জলই জীবন। কিন্তু সেই জল যদি মরণ ডেকে আনে?
এই কীটনাশকই বৃষ্টির জলের সাথে নদী বা পানীয় জলে মিশছে। এতেও হয়ত চিন্তা হতো না। কিন্তু, এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ৪৬ গুন বেশি। স্ট্যাটিস্টিক রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩.৫৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন কীটনাশক, চাষ এ ব্যবহার হয়েছে। তবে আনুমানিক, এর মাত্র ১০% কীটনাশক কীটপতঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছায়। বেশিরভাগ রাসায়নিক গাছপালা বা ফসলের গায়েই লেগে থাকে। আর অবশিষ্ট কীটনাশক মাটি, জলাশয় ও বায়ুমণ্ডলের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পরে। টক্সিকোলজিকাল গবেষণা অনুসারে, দীর্ঘ সময় ধরে কম মাত্রায় হলেও কীটনাশক যুক্ত খাবার বা পানীয় জল ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই কারণেই কীটনাশকের মাত্রা যতটা সম্ভব কম করা গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে জল পরিশোধনের, আশার বানী শোনাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া এবং চিনের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি তারা, পানীয় জল থেকে জৈব কীটনাশক দূর করা, দূষণকারী অন্যান্য উপাদান এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমানোর জন্য আরও কার্যকর পদ্ধতির প্রস্তাব করেছেন। গবেষণার ফলাফল, কেমোস্ফিয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পানীয় জল থেকে জৈব কীটনাশক অপসারণ করতে পাউডার অ্যাক্টিভেটেড কার্বন (পিএসি) ব্যবহৃত হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং ১০০% ক্ষেত্রে কার্যকরি নয়। ব্যায়সাপেক্ষ বলেই হয়ত অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আসতে হয়। এই খরচই কিভাবে কমতে পারে তার হদিশ দেবার চেষ্টা করেছেন তারা। বর্তমানে, পিএসি কণার বাণিজ্যিক আকার ৩৮ মাইক্রন (এক মিটারের এক মিলিয়ন ভাগ)। এটাই কমিয়ে ৬ মাইক্রন করে নেওয়া গেলে, ছটি সাধারণ কীটনাশক অপসারণের জন্য ৭৫% কম পাউডারের প্রয়োজন হবে। পানীয় জল খাবার আগে ৬ মাইক্রনের কণাগুলোও সহজে সরিয়ে নেওয়া যাবে। প্রচলিত জল শোধন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে কীটনাশক অপসারণ করা যায় না। পিএসি দিয়ে এই কাজটি সমাধা করা যাবে।