
কিছু পাখি, বিরল, কঠিন গাছের গর্তকে নিজের ‘সম্পত্তি’ হিসাবে দেখতে শুরু করে। সব পাখিই যে করে, তা নয়। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন কিছু স্ত্রী পাখি, যারা কেবল গর্তে বাসা বাঁধতে পারে, ‘ঘর রক্ষা’র জন্য তাদের মধ্যে বেশি আক্রমণাত্মক মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। এই আচরণ পরিকল্পিত, প্রতিরক্ষামূলক। গবেষণাটি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় , ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। দলটি “অবলিগেট সেকেন্ডারি ক্যাভিটি নেস্টার’ নামে পরিচিত প্রজাতির উপর নজর রাখে। এদের বাচ্চাদের লালন-পালনের জন্য গাছ, বেড়ার খুঁটি বা পাথুরে ফাটলের মধ্যে গর্ত খুঁজে বের করতে হয়। তারা নিজেরা এই গর্ত খুঁড়তে পারে না বা অন্য কোথাও বাসা তৈরি করতে পারে না। ডিউকের জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সারা লিপশুটজ ব্যাখ্যা করেন, “তাদের একটি গাছে একটি গর্ত খুঁজে বের করতে হয় এবং এটিই তাদের বংশবৃদ্ধির একমাত্র উপায়। বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে এই গর্তগুলি মহা মূল্যবান। এই পাখিরা শত্রুদের কেবল তাড়ায় না, চিৎকার করে, ঝাঁপিয়ে পড়ে, এমনকি তাদের যা আছে তা রক্ষা করার জন্য ঠোক্করও মারে। এই আচরণ কতটা সাধারণ তা দেখার জন্য, দলটি পাঁচটি পাখির পরিবারকে অধ্যয়ন করেছে – ভোঁরা পাখি, কাঠ ফুটকি, চড়ুই , থ্রাশ এবং রেন। প্রতিটি পরিবারের মধ্যে, তারা দুটি প্রজাতির তুলনা করেন। একটি, যারা গর্তে বাসা বাঁধে, অন্যটি যারা বাসা বাঁধে না। গবেষকরা বাসার কাছে নকল শত্রু স্থাপন করে এবং ব্লুটুথ স্পিকারের মাধ্যমে সেই শত্রু পাখির ডাক নকল করতে থাকে। তারপর, তারা পর্যবেক্ষণ করেন কোন প্রজাতির পাখি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। পার্থক্যগুলি স্পষ্ট ছিল।বেশিরভাগ বাধ্যতামূলক গর্তবাসী পাখি, তাদের সমগোত্রীয় পাখির তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। তারা শুধু প্রতিক্রিয়াই দেখায়নি উপরন্তু আক্রমণও শুরু করে। বিশেষ করে স্ত্রী পাখিরা আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখায়। সম্ভবত বাসা বাঁধার জায়গা দখল করা হলে সন্তান লালন ও সংসার হারানোর ভয় থেকে। লিপশুটজ বলেন, “আপনি হয়তো আশা করতে পারেন যে এই আক্রমণাত্মকতার কিছুটা জেনেটিক, পাখির পরিবার থেকেই এসেছে। কিন্তু গবেষকরা দেখেন, পাখির পরিবারের তুলনায় বাসা বাঁধার কৌশলই এক্ষেত্রে আক্রমণাত্মকতার কারণ”। অবশ্য, দুটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। চড়ুই সাধারণত কোমল স্বভাবের। অন্যদিকে রেনরা সবসময়ই উগ্র মেজাজি। প্রতিযোগিতার চাপে, তাদের আক্রমণাত্মক মনোভাব বেড়ে যায়, বিশেষ করে স্ত্রীদের ক্ষেত্রে এটি প্রবল”, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র কিম্বার্লি রোসভাল উল্লেখ করেছেন। প্রাণীদের আচরণে টেস্টোস্টেরনের মতো হরমোন প্রায়শই বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই দলটি আক্রমণাত্মক পাখিদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখেন। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায়, গর্তবাসী মহিলা পাখিগুলির অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরন নিঃসরণ ছিল না, অন্তত তীব্রতা ব্যাখ্যা করার মতন তো নয়ই। ফলত, গবেষকরা ভাবতে শুরু করেন জিনের কার্যকলাপের মতো আর কি এমন থাকতে পারে, যা এই আচরণের জন্য দায়ী? সূত্র খুঁজে বের করার জন্য, বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পাখির প্রজাতির জিনগত অভিযোজন পরীক্ষা করেন।
উত্তর অস্পষ্ট ছিল। হ্যাঁ, কোটরবাসী পাখিদের মধ্যে নির্দিষ্ট জিন কীভাবে সক্রিয় হয় তার কিছু ধরণ ছিল, কিন্তু এর কোনও একক আকার ছিল না। আগ্রাসনের সাথে জড়িত জিনগুলি প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন। অপরদিকে, সাধারণ সন্দেহভাজনরা এই দলে উপস্থিত ছিল না! লিপশুটজ জানান। একটি বা দুটি প্রধান আগ্রাসনী জিন নয়, সম্ভবত শত শত জিন এই আচরণের সাথে সংযুক্ত। প্রতিটি প্রজাতি তাদের বিভিন্ন সংমিশ্রণ ব্যবহার করে বলে মনে হয়।
“সম্ভবত আগ্রাসনের সাথে কয়েকশ জিন জড়িত এবং এগুলি সূক্ষ্মভাবে একসাথে কাজ করছে। প্রতিটি প্রজাতির জন্য এই সংমিশ্রণগুলি একই রকম নয়। এটা বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যিই আকর্ষণীয়,” লিপশুটজ বলেন। অর্থাৎ ভিন্ন প্রজাতির একই আচরণগত ফলাফলে পৌঁছানোর স্বাধীন উপায় রয়েছে!