মারাত্মক খেলনা চুম্বক

মারাত্মক খেলনা চুম্বক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনের বছর তিনেকের প্রজ্ঞান আর তার চার বছরের দিদি হিতাংশী হঠাৎ একদিন পেটব্যথায় তারস্বরে কাঁদছিল। মা-বাবা ও পরিবারের বাকিরা ভেবেছিলেন, হয়তো হালকা জ্বর বা বদহজম হয়েছে। কিন্তু, ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও যখন দেখা গেল কিছুতেই সারছে না তখন বোঝা গেল, ব্যাপারটা গুরুতর। পরে দেখা গেল, খেলতে খেলতে তারা দুজনেই গিলে ফেলেছিল রঙিন খেলনা চুম্বক।
ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখলেন, প্রজ্ঞানের অন্ত্রে আটকে আছে দশটি ছোট্ট চুম্বক। এগুলো অন্ত্রের ভেতরে আট জায়গায় ছিদ্র করে ফেলেছে। অন্যদিকে হিতাংশীর পাকস্থলীতে ছয়টি চুম্বক কোষকলা মেরে ফেলে ভয়ংকর ক্ষতি করেছে।
এরপর, বাচ্চা দুটোকে বাঁচাতে ডাক্তাররা শুরু করেন টানা অস্ত্রোপচার। চুম্বক প্রজ্ঞানের ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ (ডুওডেনাম) ধ্বংস করে দিয়েছিল, যার জন্য জটিল পুনর্গঠন অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। হিতাংশীর পাকস্থলীর ছিদ্র মেরামত করার জন্যও প্রায় একই রকম প্রাণ বাঁচানো অস্ত্রোপচার করতে হয়।
ডাক্তার নীতীন জৈন পরে বলেন, “এরকম অবস্থায় প্রতিটি সেকেন্ডই জীবন-মৃত্যুর লড়াই। চুম্বক শরীরের ভেতরে একে অপরকে টেনে নিয়ে কোষকলা চূর্ণ করে দেয়। রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে কোষকলা পচে যায় আর শরীরে ভয়ংকর সংক্রমণ ছড়ায়।” সাধারণ মুদ্রা বা বোতাম গিলে ফেললে তা প্রায়শই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু চুম্বকের ব্যাপার আলাদা। একাধিক চুম্বক পাকস্থলী বা অন্ত্রের ভেতরে আলাদা আলাদা জায়গায় গিয়ে হঠাৎ করে একসাথে লেগে যায়। মাঝখানে যেটুকু কোষকলা পড়ে থাকে, তা চাপা পড়ে মারা যায়। ফলে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জীবনঘাতী সংক্রমণ ও সেপসিস শুরু হয়।
এই দুই ভাইবোনের ঘটনা কোনো ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। ২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ২৩,৭৫৬টা চুম্বক গিলে ফেলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। কাতার, সৌদি আরব, তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশগুলোতেও একই বিপদ দেখা দিচ্ছে। ভারতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাসপাতালে এমন ঘটনার সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
অস্ত্রোপচারের পর বেঁচে ওঠা দুই সন্তানকে দেখে আবেগে ভেঙে পড়েন তাদের মা-বাবা এবং তারা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম রঙিন খেলনা নিরাপদ। কখনো ভাবিনি, এই খেলনা আমাদের সন্তানদের প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারত।”
চুম্বক খেলনার বিপদ নিয়ে সচেতনতা জরুরি। কারণ অনেক সময় উপসর্গ দ্রুত দেখা দেয় না। শিশুদের বমি, পেটব্যথা বা গ্যাস জমার মতো সাধারণ উপসর্গ দেখা দিলেও অভিভাবকেরা তা সাধারণ পেটের সমস্যা ভেবে ভুল করেন। অথচ বিলম্ব হলে পরিস্থিতি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
ডাক্তাররা সব অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন , কোনো মতেই শিশুদের জন্য চুম্বকযুক্ত খেলনা কেনা উচিত নয় , বিশেষ করে যেগুলোর আলগা অংশ সহজে খুলে যায়। যদি সন্দেহ হয় শিশু চুম্বক গিলে ফেলেছে, সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যান। অপেক্ষা করলে বিপদ বাড়বে। অনলাইনে অনেক খেলনাই উপযুক্ত সতর্কতা ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, শক্তিশালী চুম্বকযুক্ত খেলনার উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ ও স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেওয়া হোক।

 

সূত্র: Toy magnets almost kill siblings. Doctors save them with back-to-back surgeries ; India Today Health Desk(29/08/2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =