মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগের জীবাণু

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগের জীবাণু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ জুন, ২০২৫

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস এক মারাত্মক রোগ। এ রোগে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রদাহ দেখা দেয়। স্নায়ুগুলি যেসব তন্তু দিয়ে ঢাকা থাকে সেগুলিকে আক্রমণ করে দেহেরই নিজস্ব রোগ প্রতিরোধী কোষগুলি। স্বভাবতই স্নায়ুগুলি অকেজো হয়ে পড়ে। কী করে এমনটা হয় তা এখনো পরিষ্কার নয়। এটুকু বলা যায় যে একটি নয়, বহু কারণ এর সঙ্গে জড়িত। জিনঘটিত কারণ ছাড়াও, ধূমপান, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি, বিশেষ করে অন্ত্রে উপস্থিত কিছু জীবাণু এর সঙ্গে জড়িত। দেখা গেছে স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় এ রোগে আক্রান্ত মানুষের অন্ত্রে উপস্থিত জীবাণুগুলি অন্যরকম হয়। কিন্তু কেন হয় তা অজানা। এ রোগের হাজারো লক্ষণ। চোখের দৃষ্টি কমে যায়, ইন্দ্রিয় সংবেদনে অসুবিধা দেখা দেয়, পক্ষাঘাত এবং আরো অনেক কিছু। এসব নিয়েই দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হয় মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগীকে। এর কোনো উপযুক্ত চিকিৎসা আজও নেই।
অনেকগুলি গবেষণা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে চালিত সদৃশ যমজদের নিয়ে নতুন এক গবেষণা হয়তো এই ধোঁয়াশা কাটাতে কিছুটা সাহায্য করবে। এঁরা শুধু সদৃশই নন, এঁদের জীবন-পরিবেশও সদৃশ। সদৃশ যমজদের জিনগত গঠন প্রায় হুবহু এক। কিন্তু অনেক সময় তাদের মধ্যে একজনের এ রোগ হয়, অন্যজনের হয় না। এই বৈষম্যর কারণ নিয়েই চলেছে গবেষণা। এল এম ইউ মিউনিখে এরকম ১০০টি যমজ-জুড়ির মধ্যে গবেষকরা ৮১টি যমজ-জুড়ির মল নিয়ে তুলনামূলক পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা থেকে তাঁরা ৫১টি জীবাণু-গোষ্ঠী শনাক্ত করেন যারা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগ-আক্রান্ত এবং অনাক্রান্ত যমজদের মধ্যে আলাদা। শুধু তাই নয়, পরীক্ষাধীন যমজ-জুড়িগুলির মাধ্যে চারটি জুড়ির সম্মতি নিয়ে গবেষকরা তাঁদের ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁদের বিশ্বাস, জীবাণুদের সঙ্গে দেহের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধী কোষগুলির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ওইখানেই হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের ওইসব নমুনার মধ্যে রোগজনক জীবাণু আছে কিনা তা পরীক্ষা করবার জন্য তাঁরা এক বিশেষ ধরনের জিন-বদলানো ইঁদুর ব্যবহার করেন। এই ইঁদুরগুলি এমনভাবে তৈরি যাতে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বসতির মধ্যে ছেড়ে দিলে তাদের দেহে ওই রোগের লক্ষণ ফুটে উঠবে। ইঁদুরগুলিকে একবার দেওয়া হল যমজ-জুড়ির সুস্থ সদস্যের ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে সংগৃহীত নমুনা, তারপর অসুস্থ জনের। দেখা গেল, রোগগ্রস্ত সদস্যটির অন্ত্রের নমুনার সংস্পর্শে-আসা ইঁদুরগুলির দেহে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগের লক্ষণ ফুটে উঠল। তার মানে ওই ব্যক্তির অন্ত্রের মধ্যে রোগজনক জীবাণু আছে।
এবার গবেষকরা রোগাক্রান্ত ইঁদুরদের মল পরীক্ষা করলেন। তা থেকে সম্ভাব্য রোগজনক দুটি জীবাণু-গোষ্ঠীর সদস্যকে শনাক্ত করা গেল: ল্যাক্‌নোস্পাইরাসিয়ি এবং আইসেনবর্গিয়েল্লা। এদের সংখ্যা এত কম যে এর আগে কেবল বৃহদন্ত্রেই এদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা সম্ভব হয়েছিল। এই প্রথম ক্ষুদ্রান্ত্রে এদের অস্তিত্ব টের পাওয়া গেল। গবেষকরা বলছেন, হয়তো এরকম আরও অনেক মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগজনক জীবাণু আছে। তার জন্য আরও গবেষণা দরকার। তবে যদি শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, অল্প কয়েকটি জীবাণুই এ রোগের জন্য দায়ী, তাহলে এর জন্য ওষুধ তৈরির এক নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে। সবই বলবে ভবিষ্যৎ।
সূত্রঃ Max Planck Institute, Neusrocience

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 13 =