মা পাখি ডিম ফোটার আগেই ছানাদের গান শেখায়

মা পাখি ডিম ফোটার আগেই ছানাদের গান শেখায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১০ জানুয়ারী, ২০২৪

এক দশক আগে, অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা ফেয়ারিরেন্স (মালুরাস সায়ানিয়াস) নামে এক ধরনের গাইয়ে পাখির বাসাতে রেকর্ডার স্থাপন করে এক অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার করেছিলেন। স্ত্রী গাইয়ে পাখিরা তাদের ডিম ফোটার আগে থেকেই গান গাইছিল। আশ্চর্যজনক হল, যখন ডিম ফুটে ছানা বেরোলো , বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করলেন যে একই বাসায় বেড়ে ওঠা সমস্ত পাখি একই সুর ব্যবহার করে তাদের মা এবং বাবার কাছে খাবার চাইছে। তাদের সুরের ওঠানামা এবং শিস তাদের মায়ের গানের একটি অংশের মতো। মা পাখি তার সন্তানদের ভ্রূণ অবস্থায় ঐ একই গান শোনাতো।
পাখির ছানাগুলো ডিমের খোলার ভিতর থেকে তাদের মায়ের গান শিখছে কিনা তা জানার জন্য, গবেষকরা বিভিন্ন বাসার ডিমগুলো পালটাপালটি করে দেন। তারা দেখেছিলেন, যে ডিম ফোটার পরে ছানাগুলো তাদের নতুন বাসার পাখির গান গেয়েছিল, তাদের সত্যিকারের মা পাখির গান গায়নি, এটি ভ্রূণ অবস্থায় শেখার আচরণ নির্দেশ করে। বর্তমানে এই গবেষকদের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে এই অনন্য আচরণ অন্যান্য সাতটি সম্পর্কিত প্রজাতিতে দেখা যায়।
কার্যত সব পাখিই যোগাযোগের জন্য সহজাত শব্দ করে কিন্তু পাখির গান এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা চার্লস ডারউইনের মতো অনেক বিজ্ঞানীর অনুমান যে প্রায় একচেটিয়াভাবে পুরুষ পাখিদের মধ্যে স্ত্রী পাখিকে আকর্ষণ করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। তুলনামূলকভাবে, স্ত্রী পাখির গানকে ব্যতিক্রমী এবং অর্থহীন বলে মনে করা হয়েছিল। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে বিশ্বব্যাপী ৭০ শতাংশেরও বেশি গাইয়ে পাখিদের মধ্যে পুরুষদের পাশাপাশি স্ত্রী পাখিরাও গান করে। ফেয়ারিরেন্স-এর আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৩৩ মিলিয়ন বছর আগে পাখির গান প্রথম বিবর্তিত হয়েছিল। বিভিন্ন প্রজাতির স্ত্রী ফেয়ারিরেন্স-এর এই আচরণের নতুন আবিষ্কার এই ধারণার সহায়ক যে স্ত্রী পাখির গান একটি বিবর্তনীয় ভুল নয়, বরং পাখির জীবনের একটি বাস্তব এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে। দ্য আমেরিকান ন্যাচারালিস্টে প্রকাশিত এই গবেষণায়, মাতৃত্বের আচরণ দেখা যায়, যখন মায়েরা তাদের ভ্রূণের সাথে যোগাযোগ করে তা ছাত্র-নির্দেশিত কণ্ঠস্বরের আচরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গবেষকদের মতে কোকিলের ডিমের সাথে গুলিয়ে যাতে না যায়, তাই মা পাখি তার ছানাদের ভ্রূণ অবস্থায় এই গান শোনায়, যাতে খাওয়ানোর সময় সহজেই তারা নিজের ছানার থেকে কোকিল ছানাকে আলাদা করতে পারে। তাদের ধারণা মা পাখি নিজেদের বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতেও এই ডাক হয়তো শেখায়।