মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ

মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

 

উৎসবের মরসুমে মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য সতর্কতা। যে ব্যক্তিদের মিষ্টি বেশি পছন্দ তাদের বিষণ্নতা, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি। জার্নাল অফ ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন-এ প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি অফ সারে-এর গবেষণায় ইউকে বায়োব্যাঙ্কের ১৮০০০০ স্বেচ্ছাসেবকের খাদ্য পছন্দ সম্পর্কে তথ্য নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তাদের তিনটি সাধারণ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য-সচেতন – যারা আমিষ ও মিষ্টি খাবারের বদলে ফল, সবজি পছন্দ করে। সর্বভুক – যারা মাছ, মাংস, কিছু শাকসবজি, সেইসাথে মিষ্টি ডেজার্ট জাতীয় খাবার পছন্দ করে। আর মিষ্টিপ্রেমী – যারা মিষ্টি খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় পছন্দ করে, ফল, সবজির মতো স্বাস্থ্যকর খাবারে বিশেষ আগ্রহী নন। সারের দল রক্তের নমুনায় ইউকে বায়োব্যাঙ্কের তথ্য নিয়ে প্রতি দলের ২৯২৩ টা প্রোটিন আর ১৬৮টা বিপাকজাত পদার্থ পরিমাপ করেছেন। এর থেকে প্রতি দলে এইগুলোর স্তর কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা অনুসন্ধান করেছেন।
প্রোটিন হল শরীরের কাজের হাতিয়ার, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করা, পেশি সংকোচন প্রসারণ থেকে শুরু করে চিন্তাভাবনা পর্যন্ত সবকিছু করায়। বিপাকজাত পদার্থ হজমে ও শরীরের অন্যান্য রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সময় উত্পাদিত ছোটো অণু। আমাদের শরীর কতটা ভালভাবে কাজ করছে সে সম্পর্কে এই বিপাকজাত পদার্থ, প্রোটিন অনেক কিছু জানায়। রক্তে থাকা এই প্রোটিন, বিপাকজাত পদার্থ তুলনা করে, গবেষকরা তিন ধরনের দলের মধ্যে জৈবিক পার্থক্যের একটা স্পষ্ট ছবি পান। সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ও বায়োমেডিকাল ইনফরমেটিক্সের অধ্যাপক নোফার গেইফম্যান বলেছেন- মানুষের খাবারের পছন্দ অপছন্দ সরাসরি স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত। যদি আমাদের প্রিয় খাবার কেক, মিষ্টি, চিনিযুক্ত পানীয় হয় তাহলে গবেষণার ফলাফল পরামর্শ দেয় এটা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মিষ্টিপ্রেমীদের মধ্যে হতাশায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩১% বেশি। অন্য দুটো দলের তুলনায় এদের হৃদপিণ্ড ও শরীরের অন্যত্র রক্তনালী সরু হওয়ার থাকার সম্ভাবনা বেশি, এদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। মিষ্টিপ্রেমীদের রক্তে উচ্চ স্তরের সি রিয়্যাকটিভ প্রোটিন দেখা গেছে যা প্রদাহ ঘটায়। তাদের রক্তে উচ্চ স্তরের গ্লুকোজ, দুর্বল লিপিড প্রোফাইল দেখা যায়, যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য সতর্কতার সংকেত। আবার স্বাস্থ্য-সচেতন গোষ্ঠী, যাদের খাদ্যতালিকায় ফাইবার বেশি ছিল, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কম দেখা গেছে। আর সর্বভুক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি মাঝারিমানের ছিল।
গবেষকরা ডেটা-চালিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতি ব্যবহার করে, খাদ্য পছন্দের ভিত্তিতে ব্যক্তিদের গোষ্ঠী শনাক্ত করতে পেরেছেন। এই গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ফলাফলের পাশাপাশি জৈবিক চিহ্নিতকারী পাওয়া গেছে। তারা জানিয়েছেন প্রক্রিয়াজাত চিনি অনেক খাদ্যেই থাকে। আমাদের খাওয়ার আগে খাবার নিয়ে চিন্তা করা উচিত। গবেষকদের বক্তব্য মানুষ কী খাবে তা তারা চাপিতে দিতে চাননি। তাদের কাজ শুধুমাত্র মানুষকে সচেতন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 2 =