মীনাক্ষী

মীনাক্ষী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রাণীদের মধ্যে বলাকার পর মাছের বাঁকের সমষ্টিগত আচরণই মনোমুগ্ধকর। চারপাশের দৃশ্য মাছেরা অল্পই দেখতে পায়, তবু হাজার হাজার মাছ নিখুঁত ভাবে সমান তালে পাড়ি দেয় হাজার মাইল।

সম্প্রতি ক্লাস্টার অফ এক্সিলেন্স “কলেকটিভ বিহেভিয়ার” এবং ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিমেল বিহেভিয়ারের গবেষকদের তৈরি একটি নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছের চোখের গভীরে অনুসন্ধান করা যাবে।
বিজ্ঞানীদের তৈরি এই থ্রিডি আই-ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। এই পদ্ধতিতে মুক্তভাবে সাঁতার কাটা মাছের চোখের নড়াচড়া অনুসরণ করার জন্য ভিডিও রেকর্ডিং ব্যবহার করা হয়েছে। মাছ কীভাবে তাদের পরিবেশ বুঝতে পারে এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে সেসব এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
ধরা যাক মাছের একটি দল একসাথে সাঁতার কাটছে। প্রতিটি মাছই ক্রমাগত ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কোথায় যাবে। যদি একটি মাছ হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে, তাহলে হতে পারে সে কাছাকাছি কোনো শিকারীকে দেখেছে। আশেপাশে থাকা অন্যান্য মাছও এই পরিবর্তনটি লক্ষ্য করবে এবং তাদের অনুসরণ করবে। মাছের এই সমষ্টিগত আচরণ কোন নিয়ম অনুসরন করে? এবং তাদের এই সিদ্ধান্তগুলোর পিছনে কোন উপলব্ধি কাজ করে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে চেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা মাছের ঝাঁক থেকে শুরু করে পাখির ঝাঁক পর্যন্ত প্রাণীদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ধরন খুঁজেছেন।তারা ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলে কম্পিউটার ভিজন ব্যবহার করে রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করেছেন ।
একটি কম্পিউটার অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ঝাঁকের প্রতিটি মাছের অবস্থান এবং শরীরের ভঙ্গি, চোখের নড়াচড়া ট্র্যাক করা হয়। এরপর সিস্টেমটি এই তথ্য ব্যবহার করে বুঝতে পারে, প্রতিটি মাছ কী দেখে এবং সেটা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
সাঁতার কাটা মাছ কী দেখতে পায় তা বের করা যদিও বেশ কঠিন। এজন্য কেবল তাদের চোখ পর্যবেক্ষণ করাই যথেষ্ট নয়, কারণ চোখ সর্বদা প্রাণীদের শরীরের ভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।বিজ্ঞানীরা মাছেদের স্বতঃস্ফূর্ত বিচরণে হস্তক্ষেপ না করেই পরীক্ষা টি করতে চেয়েছিলেন। খুব গভীরে গিয়ে কাজ করে না, এমন একটি নতুন পদ্ধতিতে ক্যামেরার ছবি ব্যবহার করে মাছের শরীরের ত্রিমাত্রিক ভঙ্গি , চোখের সুনির্দিষ্ট অবস্থান এবং রেটিনার দৃশ্য পুনর্গঠন করা হয়েছে। মাছের আচরণের আরও ভালো বিশ্লেষণের জন্য এই পদ্ধতিতে একাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ক্যামেরার সংখ্যা যত বেশি হবে বিশ্লেষণ ততই নির্ভুল হবে। এটি গবেষকদের বুঝতে সাহায্য করে যে মাছ কীভাবে তাদের চারপাশ দেখে এবং মিথস্ক্রিয়া করে।

ইতিমধ্যেই গোল্ডফিশদের ওপর এই পদ্ধতির ব্যবহার করে দেখা গেছে গোল্ডফিশরা তাদের চোখের নড়াচড়ার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে যাতে তাদের আগের মাছগুলি তাদের দৃষ্টির কেন্দ্রে থাকে।

গবেষকরা নেতিবাচকভাবে চোখের নড়াচড়ার সমন্বয়ও লক্ষ্য করেছেন। তারা দেখেছেন যে মাছগুলোর চোখ একসাথে নড়ছে না। কখনও কখনও একটি চোখ একদিকে তাকায় তো অন্য চোখ বিপরীত দিকে ঘোরে।

গবেষক লি অন্যান্য মাছের উপর গবেষণা করে দেখতে চান যে তারাও এক চোখ দিয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে কিনা, এবং শিকারী মাছ শিকারের সময় উভয় চোখ ব্যবহার করে কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + 1 =