মুখের তাপমাত্রা মেপে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হতে চলেছে

মুখের তাপমাত্রা মেপে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হতে চলেছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ জুলাই, ২০২৪
মুখের তাপমাত্রা মেপে রোগ শনাক্ত

আপনি কি জানেন ঠাণ্ডা নাক আর গরম গাল উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ! বেইজিংয়ের পিকিং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানাচ্ছেন মুখের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত। তবে এই তাপমাত্রার পার্থক্য নিজের স্পর্শ দ্বারা সহজে উপলব্ধি করা যায় না কিন্তু নির্দিষ্ট এআই- এর মাধ্যমে বোঝা যায়। একটা থার্মাল ক্যামেরা এবং ডেটা-প্রশিক্ষিত মডেল এই স্থানিক তাপমাত্রার নিদর্শনগুলি ব্যবহার করে গবেষকরা রোগ শনাক্ত করতে পেরেছেন। এই গবেষণা সেল মেটাবলিজম জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এর আগে গবেষকরা মানুষের জৈবিক বয়সের পূর্বাভাস দিতে ত্রিমাত্রিক মুখের গঠন ব্যবহার করেছিলেন। তারা দেখেছেন জৈবিক বয়স ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। মুখের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা নিয়ে গবেষণায়, ২১ থেকে ৮৮ বছর বয়সের মধ্যে ২৮০০-র ওপরে চীনা ব্যক্তিদের মুখের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়। তারপর তারা এই তথ্য ব্যবহার করে এআই মডেলগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যাতে তা একজন ব্যক্তির তাপীয় বয়সের পূর্বাভাস দিতে পারে। এক্ষেত্রে নাক, চোখ, গালের মতো কিছু মুখ্য অঞ্চলের তাপমাত্রা চিহ্নিত করা গেছে যা বয়স এবং স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত। দেখা গেছে বয়সের সাথে সাথে নাকের তাপমাত্রা মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় দ্রুত হারে হ্রাস পায়, যার অর্থ গরম নাকযুক্ত ব্যক্তিদের জৈবিক বয়স কম থাকে। কিন্তু, চোখের চারপাশের তাপমাত্রা বয়সের সাথে বাড়তে থাকে। ডায়াবেটিস এবং ফ্যাটি লিভারের মতো বিপাকীয় ব্যাধিযুক্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত বার্ধক্য হয়। একই বয়সী স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের চোখের চারপাশের তাপমাত্রা বেশি থাকে। উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের গালের তাপমাত্রাও বেশি হয়। অংশগ্রহণকারীদের রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করে, গবেষকরা দেখেছেন চোখ এবং গালের চারপাশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ প্রধানত প্রদাহ সম্পর্কিত সেলুলার ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি, যেমন ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ মেরামত করা বা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করা। এই ক্রিয়াকলাপের ফলে মুখের নির্দিষ্ট অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই তাপমাত্রা কমানোর জন্য ব্যায়াম কার্যকর কিনা তা দেখতে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের দু সপ্তাহ যাবত দিনে অন্তত ৮০০ বার স্কিপিং করতে বলেছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেল অংশগ্রহণকারীদের তাপীয় বয়স পাঁচ বছর হ্রাস পেয়েছে!
গবেষকদের ধারণা ভবিষ্যতে এর ওপরে আরও গবেষণার ফলে, ডাক্তাররা একদিন রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণের জন্য এই সহজ, বিনা অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। বার্ধক্যের মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়, গবেষকদের এই টুল সুস্থ বার্ধক্য ও মানুষকে রোগমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × five =