মেকি বিজ্ঞান বনাম বৈজ্ঞানিক সত্য

মেকি বিজ্ঞান বনাম বৈজ্ঞানিক সত্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ অক্টোবর, ২০২৫

২০২৪ সালের মার্চে বি এম জে নিউট্রিশন, প্রিভেনশন অ্যান্ড হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সেখানে দাবি করা হয়েছিল প্রতিদিন অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনিগার পান করলেই নাকি মেদ গলে যাবে ফলে অতিরিক্ত ওজন সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। এই তথাকথিত চমকপ্রদ আবিষ্কারের খবরটি সাথে সাথেই ভাইরাল হয়, অসংখ্য স্বাস্থ্য ব্লগ, টিভি শো, ইউটিউব ভিডিও এবং ম্যাগাজিনে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে এবং মাসের পর মাস নিত্য বিভিন্ন প্রতিবেদনে উদ্ধৃত হতে থাকে। অথচ এমন বিপুল মাত্রায় প্রচার চলার পর খুব সম্প্রতি বি এম জে গ্রুপ গবেষণাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেছে। কারণ তদন্তে ধরা পড়েছে, গবেষণার পদ্ধতিতে চূড়ান্ত পরিমাণ গলদ রয়েছে। যেমন গবেষণায় পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে ভুল ছিল, তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যথেষ্ট সন্দেহ সাপেক্ষ, গবেষণার পদ্ধতিও স্পষ্ট নয় সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো গবেষণাটি আগে থেকে কোনো ট্রায়াল নিবন্ধনে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এটা কিন্তু বি এম জের -এর নীতি অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। অতএব সে নিয়মও লঙ্ঘিত হয়েছে। কিছু ফলাফল তো পরিসংখ্যানগতভাবে এতটাই অবিশ্বাস্য যে বিশেষজ্ঞরা পুনরায় বিশ্লেষণ করেও মেলাতে পারেননি । কাজেই তাঁরা মনে করেন, অংশগ্রহণকারীদের তথ্য আলাদাভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি।
বি এম জে গ্রুপের প্রকাশনা নীতি বিভাগের সম্পাদক ড. হেলেন ম্যাকডোনাল্ড জানান—পাঠকদের কাছে সহজ ও কার্যকর ওজন কমানোর উপায় খুব আকর্ষক হলেও এই গবেষণার ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই সাংবাদিক বা গবেষকদের উচিত হবে আর কখনোই এটির উদ্ধৃতি না দেওয়া। তাঁর মতে, বৈজ্ঞানিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ভুল স্বীকার করা ও গবেষণা প্রত্যাহার করাই সঠিক পথ। তদন্ত প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হলেও বৈজ্ঞানিক সততার জন্য তা অপরিহার্য।
গবেষকরা ভুলগুলোকে “অনিচ্ছাকৃত ভুল” বলে ব্যাখ্যা করেছেন এবং প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছেন। জার্নালের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক মার্টিন কোলমিয়ার স্বীকার করেছেন, নিবন্ধন ছাড়াই গবেষণা প্রকাশ করা তাঁদের ভুল হয়েছিল। তবে তিনি এটাও বলেন, লেখকরা এমন একটি বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট থেকে এসেছেন, যেখানে পুষ্টি গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম হয়। আর যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সবচেয়ে পোক্ত প্রমাণ সরবরাহ করে সেটা পুষ্টিবিদ্যায় সচরাচর হয় না, কারণ এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা, সময় এবং ব্যয় অনেক বেশি।

ঘটনাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, জনপ্রিয়তা মানেই বৈজ্ঞানিক সত্য নয়। আপেল সিডার ভিনিগার খেয়ে ওজন কমানোর বিষয়টা যতটা আকর্ষক, বাস্তবে ততটাই ভিত্তিহীন। স্বাস্থ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ, সঠিক পদ্ধতি আর স্বচ্ছ গবেষণাই একমাত্র ভরসা।

সূত্র: “Apple cider vinegar for weight management in Lebanese adolescents and young adults with overweight and obesity: a randomised, double-blind, placebo-controlled study” 23 September 2025, BMJ Nutrition Prevention & Health.
DOI: 10.1136/bmjnph-2023-000823ret

One thought on “মেকি বিজ্ঞান বনাম বৈজ্ঞানিক সত্য

  1. Barun Bhattacharyya

    ভাল টপিক, ভাল লেখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =