নিজের মনাস্ট্রির বাগানে বংশগতির সূত্রগুলি সমাধান করেন মেন্ডেল, অথচ ডারউইনের চেয়ে বেশী প্রযুক্তি তাঁর কাছেও ছিল না। প্রশ্ন হল তবে, মেন্ডেলের সূত্রগুলি কেন ডারউইন আবিষ্কার করতে পারলেন না ? জার্নাল অফ বায়োলজিতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দাবী করা হয়েছে, ডারউইনের পটভূমি, তাঁর প্রভাব এবং গবেষণা মূলত এমন একটি দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে ছিল, যা তাঁকে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা প্রমাণগুলি নিয়ে বিশদে চিন্তা করতে বাঁধা দেয়।
ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বে মূল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সংখ্যাগত বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ বংশগতির গাণিতিক যুক্তি তিনি পাননি দেখতে, এমনই বিতর্ক তুলে দিয়েছেন, জর্মনির কোলেজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন হাওয়ার্ড।
‘ডারউইনের বিবর্তন বোধ দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণভাবেই সংখ্যাতাত্ত্বিক ভেদের উপর এবং এই সংখ্যাভিত্তিক বৈচিত্র্যই শেষ এমন একটি ঘটনা, যেখানে স্পষ্ট মেন্ডেলীয় বংশধারার প্রমাণ পাওয়া যায়’, বলছেন প্রফেসর হাওয়ার্ড। ‘নিজেকে নিজেরই তত্ত্বে বন্দী করে ফেলেছিলেন ডারউইন, নিরবিচ্ছিন্ন বৈচিত্র্যের মধ্যে বংশগতির নিয়মগুলি এড়িয়ে গেছেন তিনি, এমনকি বিক্ষিপ্ত বংশগতির ক্ষেত্রেও যে নিয়মগুলি কাজ করে, দুর্ভাগ্যক্রমে তাও তাঁর নজরে পড়েনি’, মতামত হাওয়ার্ডের।
মোরাভিয়ান পুরোহিত ও বিজ্ঞানী গ্রেগর মেন্ডেল খুব পরিষ্কার পদ্ধতিতেই মটর গাছে বংশানুক্রমিক গুণাবলী পর্যবেক্ষণ করেন বর্নোতে তাঁর মনাস্ট্রির বাগানে। তিনি হাতেনাতে প্রমাণ করেছিলেন বংশগতির সহজ সূত্রগুলি, এখনও সেগুলো তাঁর নামেই বিখ্যাত হয়ে আছে। বিংশ শতকের শুরুতে তাঁর কাজগুলির পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়, এবং সেই সময় থেকেই জিনবিদ্যার সূত্রপাত। জীববিজ্ঞানের জ্ঞানই কেবলমাত্র নয়, বরং পদার্থবিদ্যা, সাংখ্য ও সম্ভবনাতত্ত্বে মেন্ডেলের বোধ ডারউইনের চেয়ে অনেক বেশী সুদূরপ্রসারী ছিল।
১৮৩১-১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিগেলযাত্রার আশেপাশের সময়ে ভূতাত্ত্বিক চার্লস ল্যিলের দ্বারা খুবই বেশী প্রভাবিত ছিলেন ডারউইন। ফলস্বরূপ, কয়েকটি বিশেষ জীবের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলি কীভাবে তাদের টিকে থাকার লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় – এটিই হয়ে ওঠে ডারউইনের চিন্তনের উপজীব্য। ডারউইনের মতে, এই প্রকরণ নির্বাচনের পদ্ধতিটি কয়েক হাজার প্রজন্ম যাবত কীরূপে কাজ করেছে – তা অবশ্যই জটিল।
দ্য ডিফারেন্ট ফর্মস অফ ফ্লাওয়ার্স অন প্ল্যান্টস অফ দ্য সেম স্পিসিস শীর্ষক বইতে প্রজনন-পরীক্ষায় একটি সুস্পষ্ট অর্থযুক্ত ‘একক’ রাশি সম্বন্ধে বিশদে লেখা হয়, এবং প্রাপ্ত গাণিতিক তথ্য থেকে বোঝা যায় যে সেটি আদপে মেন্ডেলীয় অনুপাত। অথচ তিনি যেহেতু বিবর্তনে সম্পূর্ণ সংখ্যাগত ভেদের ভূমিকা নিয়েই চিন্তিত এবং মনে করতেন বংশগতির নিয়ম নাকি নির্দিষ্ট গাণিতিক বিশ্লেষণ দ্বারা সমাধান করা সম্ভব নয়, তাই তিনি এই সমাপতন লক্ষ্য করতে পারেননি।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের পথেই বিবর্তন – এই তত্ত্ব খাড়া করার জন্য ডারউইন বংশগতি ও প্রকরণ নামক দুটি উপাদানের সাহায্য সর্বাধিক নিয়েছিলেন। সাধারণত পরিবেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু বিক্ষিপ্ত, প্রায় আধিভৌতিক ঘটনার অণুঘটকীয় উপস্থিতিতেই ডারউইনের বৈচিত্র্য-তত্ত্ব। যদিও ঘটনাগুলি এখন আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য।