মৌমাছি দ্বারা পরাগমিলনের ফলে নিম্ন গুণমানের বীজ উৎপন্ন হয় !  

মৌমাছি দ্বারা পরাগমিলনের ফলে নিম্ন গুণমানের বীজ উৎপন্ন হয় !  

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ জুলাই, ২০২৩

পতঙ্গ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অ্যাপিস মেলিফেরা বা ইউরোপিয়ান মৌমাছির নাম অগ্রগণ্য, কারণ এরা পরাগ সংযোগে অগ্রণী ভূমিকা নেয়। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বন্য দেশীয় মৌমাছি, মথ, প্রজাপতিকে সংরক্ষণের তালিকায় যথেষ্ট অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।

এক গবেষণায়, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, সান দিয়েগোর পরিবেশবিদ জোশুয়া কোহন এবং ডিলন ট্র্যাভিস সান দিয়েগো কাউন্টিতে তিনটে দেশীয় উদ্ভিদ প্রজাতি – সাদা সালভিয়া অ্যাপিয়ানা, কালো সালভিয়া মেলিফেরা এবং ফ্যাসেলিয়া ডিস্ট্যান্স ফুলের পরাগ মিলন নিরলসভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ করেছেন।  ট্র্যাভিস ঘণ্টার পর ঘণ্টা, অ্যাপিস মেলিফেরা বা ইউরোপিয়ান মৌমাছি অথবা বন্য মৌমাছি ফুলে বসার অপেক্ষায় থাকতেন। এই পতঙ্গগুলো ফুলে বসার পর তিনি একটা জালি ব্যাগ দিয়ে ফুল ঢেকে রেখে, পরে এর বীজ সংগ্রহ করতেন। এছাড়াও তিনি নিজের হাতে ওই উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে স্বপরাগ সংযোগ বা ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে পরাগসংযোগ করাতেন। এরপর এই ফুলগুলোও তিনি জালিব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিতেন, যাতে অন্য কোনো পতঙ্গ এগুলোতে আবার বসতে না পারে।

এইসব বীজ সংগ্রহ করে গবেষকরা গ্রিনহাউসে বীজের অঙ্কুরোদ্গম করে কতগুলো বীজ থেকে চারা গজাচ্ছে, কতগুলো গাছ বড়ো হয়ে ফুল দিচ্ছে তা দেখেছেন। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা সালভিয়া ও ফ্যাসেলিয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান মৌমাছি দ্বারা যে সব ফুলে পরাগ সংযোগ হয়েছে সেই সব ফুলে, স্থানীয় পোকামাকড়ের পরাগ সংযোগের ফুলের বীজের তুলনায় প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বীজ উৎপন্ন হয়। এবং ফ্যাসেলিয়ায় দেখা গেছে, মৌমাছি দ্বারা পরাগ মিলনের ফলে উদ্ভূত বীজের চারায় কম ফুল জন্মায়। কালো সালভিয়াতে অন্যান্য পতঙ্গ বিশেষ বসেনি, তাই তুলনা করা সম্ভব হয় নি। কিন্তু পরীক্ষার জন্য গবেষকরা এই উদ্ভিদের ফুলে যে পরাগ সংযোগ করেছিলেন, তার তুলনায় মৌমাছির দ্বারা পরাগ সংযোগের ফুলে কম বীজ উৎপন্ন হয়েছে।

গবেষকদের মতে এর কারণ হল, ইউরোপিয়ান মৌমাছি একই গাছের ফুলে অন্য পতঙ্গের তুলনায় দ্বি গুণ বেশি ঘোরাঘুরি করে, ফলে তাদের পা, ডানায় লেগে থাকা পরাগ থেকে একই গাছের ফুলে  পরাগ সংযোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কিন্তু, অন্য পতঙ্গরা আলদা আলাদা গাছে বেশি যাতায়াত করে, ফলে পরাগমিলনের সময় বিভিন্ন উদ্ভিদের পরাগ যুক্ত হওয়ার ফলে বৈচিত্র্য আসে।

এই গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশীয় পতঙ্গ ইকোসিস্টেম ও চাষ আবাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ফলত তাদের সংরক্ষণের গুরুত্বও অপরিসীম।