ম্যাটাডোর বাগ তাদের পা দেখিয়ে শত্রুকে দূরে সরায়

ম্যাটাডোর বাগ তাদের পা দেখিয়ে শত্রুকে দূরে সরায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ এপ্রিল, ২০২৪

ম্যাটাডোর বাগ, অ্যানিসোসেলিস অ্যালিপস (হেমিপ্টেরা: কোরিইডি) এক ধরনের পোকা, যাদের পিছনের পায়ে বড়ো, উজ্জ্বল রঙের টিবিয়াল বিস্তৃতি রয়েছে। এই পোকা তার পেছনের দুটি রঙিন চিত্রবিচিত্র পা নাড়তে থাকে, কিন্তু কেন তারা এটা করে তা অজানা। পুরুষ ও স্ত্রী দু ধরনের পোকাই প্রায়শই তাদের পেছনের পা দুটি উঁচু করে তুলে ধরে প্রদর্শিত করে থাকে। স্মিথসোনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর ডঃ উম্মত সোমজি দেখতে চেয়েছেন, তাদের এই পা উঁচু করে আন্দোলিত করার উদ্দেশ্য কী? প্রকৃতিতে সাধারণত পুরুষ প্রাণীরা স্ত্রী প্রাণীদের আকর্ষণ করার জন্য নানা বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে যেমন ময়ূরের নাচ, কোকিলের ডাক। আগে সোমজি -র এ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে এদের পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েই পা উঁচু করে। এর সাথে অপর লিঙ্গের প্রাণীকে আকর্ষণ করার কোনো সম্পর্ক নেই। কাছাকাছি অন্য লিঙ্গের পোকা না থাকলেও ম্যাটাডোর পোকার এই আচরণ দেখা যায়। গবেষকদের মনে হয়েছে এটা তাদের শিকারীকে দূরে রাখার এক কৌশল হতে পারে। এই কৌশল শিকারীদের পোকার রাসায়নিক সংকেত বা বাজে স্বাদের বিপদসংকেত দেয়।
পাখিদের খুব পছন্দের খাবার হল ঝিঁঝিঁপোকা। স্মিথসোনিয়ান-এর জুলিয়েট রাবিন ও অন্য গবেষকরা মটমট নামে এক বড়ো পাখি ব্যবহার করেন, এদের উজ্জ্বল, বৃহদাকার পালক, লম্বা লেজ এবং প্রখর দৃষ্টি। এই পাখিদের গাম্বোয়া শহরের কাছে জঙ্গলে ভোরবেলা ধরা হত। এরপর তাদের খোলা অঞ্চলে ছেড়ে রেখে পরীক্ষা করা হত। এই পরীক্ষার পাখিদের জঙ্গলে আবার মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। গবেষকরা এই পাখির কাছে ম্যাটাডোর পোকা আর ম্যাটাডোরের পা লাগানো ঝিঁঝিঁপোকা ছেড়ে দেন। পাখিগুলো ঝিঁঝিঁপোকা দেখলেই খেতে থাকত, কিন্তু ম্যাটাডোরের পেছনের পা লাগানো ঝিঁঝিঁপোকা তারা এড়িয়ে যেত। আর এমনি ম্যাটাডোর পোকা মোটেও তারা খায়নি। এর থেকে বোঝা গেছে ম্যাটাডোর পোকার পা যেমন তাদের দূরে সরিয়ে রাখে, তেমন রাসায়নিকের জন্য তাদের পাখিরা এড়িয়ে যায়।
ম্যাটাডোর পোকা খেতে পাখিদের কেমন লাগে, এটা জানার জন্য পোকা চেনেনা এমন মুরগি ছানাদের ম্যাটাডোর পোকা আর ঝিঁঝিঁপোকা খেতে দেওয়া হয়েছিল। গবেষকরা দেখেছেন মুরগি ছানারা একটা ম্যাটাডোর পোকা খেয়ে মুখ সরিয়ে নিয়ে মাথা নাড়তে থেকেছিল, কিন্তু তাদের ঝিঁঝিঁপোকা খাওয়া দেখে মনে হয়েছিল, তারা বেশ খুশি। তাদের এই গবেষণা বিহেভিওরাল ইকোলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে।