হরগজার হরেকরকম
বদনাম হবে জেনে ও তবু,
সুন্দরবনকে ভালবেসেছি।
তার রুপের কাছে, মোর কলঙ্ক হোক না,
তা ও চেয়েছি।
হরগজা একটি গুল্ম জাতীয় ম্যানগ্রোভ। সারা গায়ে কাঁটা – কাণ্ড, ডালপালা এবং পাতা। এমনকি পত্র দণ্ড, পাতার কিনারা ও অগ্রভাগ কাঁটায় ভর্তি। এরা ঝোপ তৈরি করে। সুন্দরবনে এর খুব বদনাম। লোকে একে এড়িয়ে চলে। সুন্দরবনের যে রূপ, তার কাছে এ খুব বেমানান। তাই একে কলঙ্ক নিয়েও বেঁচে থাকতে হয়েছে। আসল ব্যপার হল, লবণ পরিবেশে বাঁচার জন্য এ এই ধরনের অভিযোজন করে নিয়েছে। পাতার মধ্যকার জল পত্র রন্ধের মধ্য দিয়ে বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যায়। তাই কাঁটা তৈরি করে পাতার আয়তনকে কতকটা সংকুচিত করে নিয়েছে, যাতে অতিরিক্ত জল সহজে না বেরিয়ে যায়। এটা এক ধরনের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন। অন্য একটি ব্যাপার হল আত্মরক্ষার অভিযোজন – কাঁটা একে সহজে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে। তাই গবাদিপশু এবং মানুষজন একে খুব একটা ঘাঁটায় না।
হরগজার উচ্চতা খুব বেশি নয়, তুলনায় ডালপালা অনেক। কাণ্ডের গোড়ায় ঠেসমূল থাকে। এই মূলগুলি কাণ্ডকে ঘিরে চারদিক দিয়ে বেড়ে ওঠে। তারফলে এরা সবদিক থেকে সুরক্ষিত। উঁচু, নিচু এবং অসমান জায়গায় -সব বাসস্থানে এরা জন্মাতে পারে। বীজকেও এরা সুরক্ষিত রাখে ‘ক্র্যপতো-ভিভিপেরি’ বা লুকনো জরায়ুজ অঙ্কুরদ্গমের মাধ্যমে। সময় মত অনুকূল পরিবেশে চারাগাছ বেড়ে ওঠে। তাই এদের সংখ্যা সুন্দরবনে ভালই আছে।
অনেক অপছন্দের গুন থাকলেও, একটা গুনে এরা সবাইকে আকৃষ্ট করে, তা হল এদের ফুলের রঙ বিভিন্ন – সাদা, বেগুনি, সাদাটে–বেগুনি, ও ফেকাসে–লালচে – এই ধরনের রঙগুলো পাপড়ির শোভাতে বৈচিত্র্য আনে। এর উপর কালো ভ্রমর যখন গুন গুনিয়ে যায়, আহা মন ভরে যায়! বিশ্বখ্যাত সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশের গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলা যায় – ‘কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়, ও ভাই রে ও ভাই, কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’।