ম্যানগ্রোভ ও সুন্দরবনের কথা/৭

ম্যানগ্রোভ ও সুন্দরবনের কথা/৭

রথীন মণ্ডল
Posted on ২৩ অক্টোবর, ২০২১

হেঁতাল বনে মাতাল হাওয়া

সুন্দরবনের হেঁতাল গাছের গলায় চন্দ্রহার,
দিনে দিনে বাড়ছে যে তার রূপেরই বাহার।।

হেঁতাল সুন্দরবনের আর একটি পাম জাতীয় ম্যানগ্রোভ। সুন্দরবনের সবাই হেঁতাল গাছ চেনে। হেঁতাল গাছের ঠিক মাথার নিচ থেকে ফলের ঝুরি বের হয়ে ঝুলতে থাকে। ফলগুলো পেকে গেলে সোনালি রঙের হয়। ঠিক খেজুর গাছের ফলের ঝুরির মত। সারি সারি হেঁতাল গাছের ফলের ঝুরিগুলো পড়ন্ত সূর্যের সোনালি আভায় চন্দ্রহারের মত দেখায়। এ এক অনন্য রূপের বাহার।
সুন্দরবন আছে, হেঁতাল গাছ নেই, এটা ভাবা যায় না। বাড়ীতে যে পাম গাছ থাকে, এরা ঠিক ঐ রকম উঁচু হয়। কিন্তু মাথাটা ভারি ও ডালপালা ছুঁচল কাঁটাতে ভরতি। পাতার রঙ সবুজ ও পরিণত হলে হলদে হয়। এটি গুল্ম জাতীয় গাছ। এরা ঝোপ ঝাড় তৈরি করে। সবুজ-হলুদ ডালপালায় যে রঙের বৈচিত্র্য আসে, তা বাঘেদের গায়ের রঙের সঙ্গে মিশে যায়। তাই এদের পিছনে লুকিয়ে থেকে শিকার ধরার উপযুক্ত জায়গা। মানুষ তাই হেঁতাল বনকে সন্তর্পণে এড়িয়ে চলে।
সুন্দরবনের শক্ত মাটিতে হেঁতাল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। মাটিতে যদি বাতাস চলাচল কম হয়, হেঁতাল গাছ থেকে তখন শ্বাসমূল বের হয়। এরা শ্বাসপ্রশ্বাস চালিয়ে গাছকে বাঁচিয়ে রাখে। এই গাছের কাণ্ড খুব শক্ত হয়। সহজে ভেঙে যায় না। এদের গুচ্ছ মূল থাকে, তাই চারধারের মাটিকে এরা আঁকড়ে ধরে রাখে। এই গাছের বন ভুমিক্ষয় রোধে সাহায্য কারে।
পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র সুন্দরবনে হেঁতালের গরিমা দেখা যায়। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়ণ বৃদ্ধিতেও এদের লুপ্ত হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। জ্বালানি হিসেবে হেঁতাল গাছ বহুল ব্যবহৃত হয়। এই গাছের শক্ত কাণ্ড ঘরের খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনের লোকালয়ের রাস্তাঘাটে হেঁতালের গাছ দেখা যায়। গরিব মানুষরা এই গাছের লাঠি দিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে খাট বানায়। বাড়িতে বয়স্ক কুটুম্ব এলে তাদের শুতে দেওয়া হয়। রঙ্গ করে বলা যায় …’তালই পালঙ্কে ঘুমাইছে, সোনা মাওই গো, তালই পালঙ্কে ঘুমাইছে’।
(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 3 =