ম্যালেরিয়ার কোপে প্রতি বছর বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। ভারতেও এর প্রকোপ কিছু কম নয়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা কামড়ালে তার লালার সঙ্গেই আমাদের শরীরে ঢোকে ম্যালেরিয়ার জীবাণু। মানুষের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার বাহক পরজীবী চার রকম— প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, প্লাসমোডিয়াম ওভিলি এবং প্লাসমোডিয়াম ম্যালেরি। তাদের মধ্যে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের আক্রমণেই হয় প্রাণঘাতী ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া। শুধু বর্ষাকালে নয়, ম্যালেরিয়া হানা দিতে পারে যে কোনও সময়েই। ২০২২ সালে, প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬১৯,০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। কয়েক দশক ধরে, পরজীবীরা, সমস্ত ম্যালেরিয়ার ওষুধের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, ফলে এই রোগের বিস্তার রোধ করা বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ। ইউসি রিভারসাইড, ইউসি আরভাইন এবং ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের একটি দল ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে একটি নতুন ওষুধ তৈরি করেছেন এবং এর কার্যপ্রণালী চিহ্নিত করেছেন। গবেষকরা ইঁদুরের কিছু মডেলে তৈরি করেন যেগুলোর মধ্যে মানুষের রক্ত রয়েছে। সে সব ইঁদুরে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে এক নতুন ওষুধ, নাম MED6-189 ম্যালেরিয়ার ওষুধের প্রতি সংবেদনশীল এবং প্রতিরোধী পি ফ্যালসিপেরাম স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকরী। গবেষণাটি সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গবেষকরা দেখেন MED6-189 পি. ফ্যালসিপেরামের কোশে উপস্থিত এপিকোপ্লাস্ট এবং অন্যান্য ভেসিকুলার অর্গ্যানেলিকে লক্ষ্য করে কাজ করে এবং তাদের কাজ ব্যাহত করে। ফলে পরজীবীর বিকাশে বাধার সৃষ্টি হয় এবং লোহিত রক্তকণিকার সংক্রমণ রোধ করে। এই দ্বৈত কাজের পদ্ধতি প্যাথোজেনকে প্রতিরোধী হয়ে উঠতে বাধা দেয়। ফলে ওষুধটি ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আরও কার্যকারী হয়ে ওঠে।
MED6-189 এক ধরনের সিন্থেটিক যৌগ যা সামুদ্রিক স্পঞ্জ থেকে নির্যাসিত যৌগের মতো। ইউসি আরভিনের রসায়ন ও ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ভ্যান্ডারওয়ালের পরীক্ষাগারে যৌগটিকে সংশ্লেষিত করেছেন। গবেষকদের মতে বেশিরভাগ অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ প্রাকৃতিক জিনিস অথবা প্রাকৃতিক বস্তু ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। MED6-189 তার অন্যথা নয়। এটি কার্যকারী কারণ পি ফ্যালসিপেরামে এটি বিভিন্ন দিক দিয়ে আক্রমণ করে ফলে পরজীবীটি যৌগের প্রতি দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনা। স্পেনের গবেষকরা ইঁদুরের উপর এই ওষুধ ব্যবহার করে ফল পেয়েছেন। অন্য একটি গবেষণায় ওষুধটি বানরকে সংক্রামিত করা পরজীবী পি. নলেসি-র উপর পরীক্ষা করা হয় এবং ফলও পাওয়া যায়। গবেষকরা ওষুধটি নিয়ে আরও পরীক্ষা চালিয়ে যেতে চান। তাদের আশা এবার হয়তো ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ভয়কে সত্যি-সত্যিই জয় করা যাবে।