‘যথার্থ স্থানে’ বৃক্ষরোপণ বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে কার্যকরী

‘যথার্থ স্থানে’ বৃক্ষরোপণ বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে কার্যকরী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ মার্চ, ২০২৪

গাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে উষ্ণতা হ্রাস করতে সাহায্য করে, বনভূমি নষ্ট হলে তা পুনরুদ্ধার করতে বা বনভূমির এলাকা বাড়াতে গাছের চারা রোপণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক হাতিয়ার। তাছাড়াও গাছ বাস্ততন্ত্র রক্ষা ও বায়ু শোধিত করে। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে ফরেস্ট রিস্টোরেশন বিজ্ঞানী সুসান কুক- প্যাটন জানিয়েছেন, কোনো কোনো সময়ে বেশি ভূমিকে আচ্ছাদিত করে ফেলে যার ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে কম সূর্যালোক প্রতিফলিত হয় ফলে পৃথিবী আরও তাপ শোষণ করে উষ্ণ হতে থাকে।
কোনো পৃষ্ঠ থেকে আলোর যে ভগ্নাংশ প্রতিফলিত হয় তা হল ঐ পৃষ্ঠের অ্যালবেডো। সম্পূর্ণ আলো প্রতিফলিত হলে, অ্যালবেডো ১ এর সমান হয়। যদি ৩০% আলো প্রতিফলিত হয়, তাহলে অ্যালবেডো ০.৩। পৃথিবী পৃষ্ঠের অ্যালবেডো (বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর, ভূমি পৃষ্ঠ) থেকে বোঝা যায় যে কতটা সৌরালোক, তাৎক্ষণিকভাবে মহাকাশে প্রতিফলিত হয়। ভূমি ও মহাসাগর যেমন অতিরিক্ত তাপ আর বিশ্বউষ্ণায়নকারী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন শোষণ করে পৃথিবীকে ঠাণ্ডা রাখে তেমন অ্যালবেডো পৃথিবীর অপর শীতলতা নিয়ন্ত্রণকারী। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন গাছ লাগিয়ে মাটিকে আচ্ছাদিত করার ফলে পৃথিবীর অ্যালবেডোতে পরিবর্তন হয়েছে। সৌর বিকিরণ গ্রহের পৃষ্ঠে পুনরায় ফিরে এসেছে। আগে এটা মাপার সরঞ্জাম ছিল না, নতুন মানচিত্র ব্যবহার করে, গবেষকরা প্রথমবার গাছের শীতলতায় প্রভাব এবং অ্যালবেডো হ্রাসের জন্য উষ্ণায়ন বিবেচনা করতে সক্ষম হন।
আগে গাছ লাগানোর সুফল নিয়ে ভাবার সময় অ্যালবেডোর কথা মাথায় রাখা হয়নি। গবেষকের মতে পলিসি রূপায়নকারীরা এ নিয়ে ভাবলে সঠিক স্থানে গাছ লাগিয়ে উপকার পাওয়া যাবে। পৃথিবী পৃষ্ঠের অ্যালবেডো সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয় বরফঢাকা অঞ্চলে, সেস্থানে আয়নার মতো চকচকে তুষার ও বরফ সূর্যের আলোর ৯০% পর্যন্ত প্রতিফলিত করতে পারে।
অনেক দেশ বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে কোটি কোটি গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু তা পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তের জন্য সমভাবে কার্যকারী নয়। অ্যামাজন এবং কঙ্গো বেসিনের আর্দ্র, গ্রীষ্মমন্ডলীয় পরিবেশ কার্বনের উচ্চ সঞ্চয়স্থান এবং এখানে অ্যালবেডোতে কম পরিবর্তন হয় বলে এখানে বনসৃজন পুনরায় করা যেতে পারে। নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি এবং সাভানার ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। কুক-প্যাটনের মতে সর্বোত্তম অবস্থানে বৃক্ষরোপণের প্রকল্পেও অ্যালবেডোর পরিবর্তন বিবেচনা করলে সেখানে অনুমানের তুলনায় ২০ শতাংশ শীতলতা কম হয়। গবেষকদের মতে অর্থ, সময়, সম্পদ, মানুষ, গাছের চারা ব্যবহার করে সর্বাধিক জলবায়ুর সুবিধা পাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − one =